অসৎ ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে : খাদ্যমন্ত্রী

The price of rice has increased suddenly

ঢাকা: খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে তারা সফল হবে না। বাজারে মোটা চালের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আজ সচিবালয়ে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির নেতদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা জানান খাদ্যমন্ত্রী।

কামরুল ইসলাম বলেন, গত বছর এই সময়ে ভারত থেকে আড়াই থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন মোটা চাল আমদানি হয়েছিল। গত বছর শুল্ক ছিল না। কিন্তু এবার শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে এবছর একই সময়ে মাত্র ৩৭ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। এসব কারণে এবার মোটা চালের দাম একটু বেড়েছে।

তিনি বলেন, এবছর ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করেনি। এজন্য আমাদের কৃষকরা লাভবান হয়েছে। তারা চালের ন্যায্য দাম পেয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে মোটা চালের দাম আর বাড়বে না। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মোটা চালের সরকারি রেট ৩৩ টাকা। কিন্তু কেজিতে এই চালের দাম বেড়েছে এক থেকে দেড় টাকা। এই সময়ে চালের দাম একটু বাড়ে। তবে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আছে।

আমদানী করা চালের উপর কখনোই শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে না জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে চায়। যাতে করে সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়। আমরা সেই সুযোগ দেবো না। শুল্ক প্রত্যাহার হবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের কৃষকরা যাতে ভাল থাকে সেই ব্যবস্থাই হয়েছে। ভারত থেকে মোটা চাল না এলে আমাদের দেশের কৃষকরাই চাল উৎপাদনে বেশি আগ্রহী হবে।

চালের দাম বাড়লে কৃষক খুশি, শুল্ক প্রত্যাহার হবে না:

দেশে চালের সংকট নেই, চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কৃষকদের লাভবান করতে চাল আমদানির ক্ষেত্রে আরোপ করা শুল্ক কোনো অবস্থাতেই প্রত্যাহার করা হবে না।

কামরুল ইসলাম বলেন, বাজারে চিকন চালের দাম খুব একটা বাড়েনি। গত বছরের এ সময়ের তুলনায় মোটা চালের দাম দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়ে সাড়ে ৩৪ টাকা হয়েছিল। এ মুহূর্তে পাইকারি বাজারে চালের দাম সাড়ে ৩৩ টাকা। মোটা চাল সরকার ক্রয় করছে ৩৩ টাকায়।

তিনি বলেন, আমাদের তিন লাখ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের টার্গেট ছিল। এ মুহূর্তে তা সংগ্রহ হয়েছে তিন লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। মিল মালিকদের সঙ্গে এ পর্যন্ত চুক্তিপত্র হয়েছে চার লাখ ২৬ মেট্রিক টনের। ১৫ মার্চ পর্যন্ত আমন সংগ্রহের অভিযান চলবে।

এখনও প্রতিদিন চারশ’ থেকে সাতশ’ মেট্রিক টন পর্যন্ত চাল আসছে। চালের দাম যদি বেশি থাকতো বা অসামঞ্জস্য থাকতো তাহলে মিল মালিকরা আমাদের ৩৩ টাকা দরে দিতে পারতো না, বলেন খাদ্যমন্ত্রী।

মোটা চালের দাম বাড়ার কারণ শুল্ক আরোপ বলেও জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, বাজারে মোটা চালের দাম বেশি হওয়ার কারণ হলো, গত বছর এ সময় ভারত থেকে চাল এসেছে আড়াই থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন, বিনা শুল্কে। এখন সরকার শুল্ক আরোপ করায় এ সময় পর্যন্ত চাল এসেছে মাত্র ৩৭ হাজার মেট্রিক টন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, শুল্ক আরোপ করার ফলশ্রুতিতে যারা ভারত থেকে ফ্রি স্টাইল চাল আমদানি করতো, ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পাইকারি বাজারের সঙ্গে দাম বৃদ্ধি করেছে। তারা মনে করছে, কোনো রকম একটা অবস্থার সৃষ্টি করে আমরা যেনন শুল্কটা প্রত্যাহার করি। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই শুল্ক প্রত্যাহারের কোনো প্রশ্নই আসে না।

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ফ্রি স্টাইলে মোটা চাল নিয়ে আসায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। চালের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছিল। এবার ট্যাক্স আরোপ করার ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা কৃষকদের লাভবান করতে চাই। দাম একটু বেশি থাকলে কৃষরা লাভবান হয়। কৃষকরা অত্যন্ত খুশি হয়। কাজেই আগামী দু’মাস পর বোরো মৌসুমে সংগ্রহ শুরু হলে মোটা চালের বাজারে কোনো অসুবিধা হবে না।

মিল মালিকদের সঙ্গে আলাপ করেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সংকট হবে না। চাল পর্যাপ্ত মজুদ আছে। মোটা চালের কোনো সমস্যা হবে না। এই মুহূর্তে প্রায় নয় লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য মজুত আছে।

পাইপলাইনে আছে দুই লাখ টন গম ও ৯০ হাজার টন চাল। আগামী ১৮-২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৫০ হাজার টন দেশে পৌঁছে যাবে বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশীদ বলেন, মোটা চালের বাজার বেড়েছে এটা সত্য। যতটুকু বেড়েছিল তা থেকে আবার কেজিতে এক টাকা কমে গেছে। আমরা আশা করি নতুন করে আর চালের বাজার বাড়ার সম্ভাবনা নেই। দেশে পর্যাপ্ত চাল আছে। যে অবস্থায় গেছে তা স্থিতিশীল থাকবে। তিনি বলেন, পাইকারি দামে বাজার তেমন বাড়েনি। কিন্তু রিটেইলে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে তারা সুযোগ-সুবিধা পেলে কেজিতে দু’এক টাকা বেশি নিয়ে থাকে।