অসহায় সমাজ ও লোক দেখানো মানবতা

মুহম্মদ লোকমান হুসাইন: ইট পাথর আর সুরকিতে গড়া শহরটির মানুষগুলো একটু বেশিই স্বার্থপর..সমাজ কাঠামোতে বড় অসহায় এই শহুরে মানুষ গুলো, কেউ কারো নয়,বোবা কান্নার মত কেউ কেঁদে যায়। দেখার কেউ নেই।

মনবতার যে ছড়াছড়ি তা কিন্তু কেবল লোক দেখানো মানববন্ধন, প্লেকার্ড  আর ফেস্টুনে মোড়ানো।

এই তো সকালে শাহবাগ থেকে বাসে মিরপুরর যাচ্ছিলাম, দেখলাম বাসের মধ্যে ২৪/২৫ বছরের এক মহিলা নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যাবার উপক্রম। সাথে দুজন মধ্যবয়স্ক মহিলা ফার্মগেট এসে সবাইকে ডাকছে- ভাই একটু নামিয়ে দেন না?..

দেখলাম সবাই যে যার যার মত নেমে যাচ্ছে, বিবেকের তাড়নায় মহিলাটির কাছে গেলুম। তাকে হাসপাতালে নিলুম সেখানে ডঃ অপারগতা প্রকাশ করলো..

তিনি সোহরাওয়ার্দি, ঢাকা মেডিকেল সাজেস্ট করলেন। এবার বাধ সাজলো পারিবারিক দ্বন্দ, কোথায় নিবে, খরচ কে বহন করবে?

মহিলাটি তার রোগের কথা গোপন কেন করলো?.

কত সব কাহিনী..

দু পরিবারে দ্বন্দ যেন শেষ হয় না..

সাথে থাকা মহিলাটি বললেন ওর স্বামী বলছে চিকিৎসা করাতে হবে না, বাসায় নিয়ে যাবো, মেরে দিলাম এক ধমক। আগে পারিবারিক দ্বন্দ, না জীবন?.

মহিলাটা নিরব, চোখে পানি দেখতে পেলাম। বেশ অসহায় দেখাচ্ছিল..

এবার অসুস্থ মহিলাটির স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বললাম, কথার মাঝে মেরে দিলাম এক ধমক, বেচারা ঠিক বুঝতে পারলো..তার মনুষ্যত্মবোধ উদয় হলো।

তারপর মহিলাটির বাপের বাড়ি ফোন করলাম তাদেরও দেখি ইয়া বড় অভিমান, রাগ ক্ষোভ যাই বলেন।

প্রথমে এলাকার মাতব্বর মশাইয়ের লগে কথা কইলাম, বেচারা অল্পতেই বুঝলেন। তিনি একটু পরে মহিলার ভাইকে ফোন ধরিয়ে দিলেন, ভদ্র লোক এক গোঁয়ারে প্রকৃতির, কিছুতেই কিছু বুঝতে চায় না, মেরে দিলাম এক ধমক।

আমাকে জিজ্ঞেস করে আপনি কে হন?  উত্তরে বললাম-  আপনার বাপ!!

বেচারা এবার গড়ম হতে লাগলো, পর মুহুর্তে বললাম- দেখেন, আপনি তার রক্তের ভাই নন, একজন সামান্য পথচারী। বিবেকের তাড়নায় ভাই হয়ে বোনের পাশে দাড়িয়েছি…। তিনি এবার নরম হতে লাগলেন। কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। কিছু কথার পর ফোন টা রেখে দিলাম।

এটা কোন কল্পকাহিনী নয়, এদেশের আবহমান বাঙ্গালী সামাজের চিরন্তন চিত্র, যেখানে পারিবারিক দ্বন্দ গুলো হর হামেশাই মহুমাত্রিক রুপ লাভ করে চলেছে। পারিবারিক দ্বন্দগুলোও বেশ জটিল। সেখানে দয়া মায়া স্নেহ ভালোবাসা প্রতিনিয়তই হার মানছে পরিবার কর্তার জেদের কাছে। নিজের মতের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হলেই সেটা বয়কট, প্রতিষ্ঠিত হয় নিজ জেদ।

বড় অদ্ভুত লাগে সামাজের এই নোংড়া বিষয়টি ।

এর কি শেষ নেই? যদি থাকে তবে সেটা কবে ?.

এর কিন্ত শেষ ঠিকই দেখতে পাই তবে, সেটা কারো বিয়োগ বেদনায়,অকালে ঝরে যাওয়া কোন গল্পে। যখন এর শেষ টা দেখি তখন কিন্তু তাদের অাফসোসের অন্ত থাকে না। এই অাফসোসের কি কোন দরকার আছে?.

বড় অসহায় আমাদের সমাজ, দুর্বল তার ভিত, ঠুনকো সম্পর্কগুলো। আর মনবতা সে তো লোক দেখানো ছেলে খেলা, প্লেকার্ড আর ফেস্টুনে মোড়া।

এত কিছুর মাঝে শান্ত্বনা যা পেলুম, তা হলো মানবতার ধারক বাহক, সাঁই করে রাস্তা পার করে ফার্মগেট ওভার ব্রিজ পার হয়ে, এক ভাইকে ডাক দিলুম, ভাই একটু ধরেন, দুজন এগিয়ে এলো, তাদের সাহায্যে হসপিটাল পর্যন্ত নিলাম। তাদের একজন কাজের ব্যাস্ততায় একটু পরে চলে গেলেন, এক জন কিন্তু রয়েই গেলেন..সোহরাওয়ার্দি অবধি তাকে সঙ্গে পেলাম।সেখানে ভর্তি করানোর পর তার পরিচয় জানলাম ,তিনি প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রথম বর্ষের ছোট ভাই।

তখন শুধু একটা কথাই মনে হলো মানবতার আরেক নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

লেখক: বিএসএস, এমএসএস,  রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়।