অর্থনীতির ‘বৈরি হাওয়া’ পুঁজিবাজারে

আবারও শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সপ্তাহের প্রথম দিনের লেনদেনে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই বড় দরপতন হয়েছে, যার পেছনে দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার চাপ দেখতে পাচ্ছেন বাজার বিশ্লেষকরা। রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন নেমে এসেছে ৩৪৯ কোটি টাকায়। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ বাজারে ৪৩২ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনেদন হয়েছিল। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার। বৃহস্পতিবার এ বাজারে ২৫ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছিল।

পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহও ভালো যায়নি। পাঁচ দিনের লেনদেনের মধ্যে দুই দিন সূচক সামান্য বাড়লেও তিন দিন কমেছে। তার ধারাবাহিকতায় রোববার নতুন সপ্তাহ শুরু হয়েছে দর পতনের মধ্য দিয়ে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, “যখন অর্থনীতির অবস্থা ভালো ছিল তখনও তার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে লক্ষ্য করা যায়নি। সুশাসনের অভাব এবং নানা কারসাজির ঘটনার বিচার না হওয়ায় বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ছিল না। এখন অর্থনীতির খারাপ অবস্থায় পুঁজিবাজারের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলেই মনে হচ্ছে।”

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে গতি সঞ্চার হয়েছিল সেটা এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। আর শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ-প্রণোদনার পরও পুঁজিবাজার চাঙ্গা হয়নি।

চলতি বছরের শুরুতে ডিএসই’র প্রধান সূচক প্রায় ৬ হাজার পয়েন্টে উঠেছিল। বছরের শেষ ভাগে এসে সেই সূচক প্রায় দেড় হাজার পয়েন্ট হারিয়ে ৪ হাজার ৬০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে।

বছরের শুরুতে দৈনিক লেনদেন ছিল ১ হাজার কোটি টাকার মত। এখন লেনদেন হচ্ছে তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকার মত। কোনো কোনো দিন লেনদেন তিনশ কোটিরও নিচে নেমে যাচ্ছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকই এখন নেতিবাচক। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় কমছে। মূল্যস্ফীতি উর্ধ্বমুখী। চাপে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানিও কমছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিনিয়োগে। প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার বিশাল অংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে ডুবতে বসেছে ব্যাংক খাত।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, “ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার এখনও বেশি। মানুষ কিন্তু ব্যাংকে টাকা রাখছে; পুঁজিবাজারে আনছে না। সে কারণে পুঁজিবাজারে নগদ টাকার অভাব দেখা দিয়েছে।”

“অর্থনীতির এখন খারাপ অবস্থায়। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। তারল্য সংকট কাটছে না।”

রিজভী বলেন, তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি কম লভ্যাংশ দিয়েছে, দুর্বল মুনাফা দেখিয়েছে। সেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমছে। তার নেতিবাচক প্রভাবও বাজারে পড়ছে।

অর্থনীতির প্রভাব ছাড়াও পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট আছে বলে মনে করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, “আমাদের পুঁজিবাজারে সুশাসনের অভাব আছে। সে কারণে বাজারের থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা চলে যাচ্ছে।”

এর উদাহরণ দিতে গিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, “পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো সঠিক নিয়মে তাদের হিসাব দেখাচ্ছে না। কোম্পানিগুলোর ৩০ শতাংশ এবং পরিচালকদের ২ শতাংশ শেয়ার ধারনের নিয়ম পালন করানো যায়নি। ”

“আইসিবি ঠিকমত কাজ করছে না। বার বার বলেও ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনা যাচ্ছে না। সরকারি কোম্পানি বাজারে আসছে না। এভাবে একটা ভালো পুঁজিবাজার আমরা আশা করেতে পারি না।”