অপ্রতুল বরাদ্দে চলছে কৃষি গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চিনি, ডাল, মসলা ও তেলজাতীয় পণ্যের চাহিদার সিংহভাগই পূরণ হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে। যদিও জাত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব এসব পণ্য। এজন্য প্রয়োজন উচ্চতর গবেষণা। তবে গবেষণার অপ্রতুলতায় শুধু এ চারটি পণ্য আমদানিতেই প্রতি বছর গড়ে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা আসছে কৃষি খাতে। সামনের দিনে মানুষের খাদ্য চাহিদা হবে বহুমুখী। বাড়বে পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা। বিপণন ব্যবস্থায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও মোকাবেলা করতে হবে জমির উর্বরতাশক্তি হ্রাস ও প্রযুক্তিগত ঘাটতির চ্যালেঞ্জ। এজন্য আগামীতে স্বল্প জমিতে অধিক ও বহুমুখী ফসল উৎপাদন করতে হবে। জাত উদ্ভাবন ও তা দ্রুত কৃষকের কাছে পৌঁছতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে সার, সেচ ও পেস্ট ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। এজন্য বাড়াতে হবে গবেষণা। যদিও এসব গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাব রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটের (এফপিএমইউ) ‘মনিটরিং রিপোর্ট ২০১৯ অব দ্য বাংলাদেশ সেকেন্ড কাট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’ প্রতিবেদনে কৃষি গবেষণায় অপ্রতুল বরাদ্দের বিষয়টি উঠে এসেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৮৭ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয় ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সিস্টেমভুক্ত (নার্স) গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। পরের অর্থবছরে এ বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় ৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ বরাদ্দ কিছুটা বেড়ে হয় ৬৮৮ কোটি টাকা। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এটিকে যথেষ্ট বলে মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে উদ্ভাবনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে কিনা, সেটিও বিশ্লেষণে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. ওয়ায়েস কবীর বলেন, কৃষি খাতে গবেষণায় যেমন বরাদ্দ কম, তেমনি গবেষণার অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও সক্ষমতার অভাব রয়েছে। জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং সেগুলোর সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষিতে আসা নতুন প্রতিবন্ধকতাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা হচ্ছে না। শস্য বহুমুখিতার অভাব, হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, পানি ও জমি সংকট এবং উন্নত উপকরণ, বিশেষ করে বীজ ও সারের অভাব রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে আগামীতে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তাসহ সার্বিক কৃষির উন্নয়নে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। গবেষণায় বরাদ্দ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি গবেষণার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। পাশাপাশি গবেষক তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে।

নার্সের অধীন এসব গবেষণা প্রতিষ্ঠানে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ৩ থেকে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশের নিচেই বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যদিও চীন, আমেরিকা ও উন্নত দেশগুলোয় এ হার ১ শতাংশের উপরে। অন্যদিকে ভারতে এ হার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশের উপরে। ১০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বারিতেই সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ অর্থবছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। অন্যদিকে বিএআরসি ও বিএসআরআই প্রত্যেকে পাচ্ছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। যদিও ধান গবেষণার জন্য ব্রি পাচ্ছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, সামনের দিনের কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, আবাদ ও বিপণন পদ্ধতিতে আধুনিকায়ন, পানিবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা প্রতিনিয়ত গবেষণা করা হচ্ছে। সফলতাও আসছে বলেই দেশ দানাদার খাদ্যশস্যে আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রয়োজন অনুসারেই গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রতি বছরই এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। সামনের দিনে আরো বেশি বাড়ানো হবে। পাশাপাশি কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে।