অনিয়ম আর প্রাণহানির মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ, নিহত ৮

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনের ভোটেও ব্যাপক ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল নিয়ে সংঘর্ষ-সহিংসতায় প্রাণহানি এবং প্রতিপক্ষের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতায় আজ সন্দ্বীপ, কেরানীগঞ্জ, যশোর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ ও জামালপুরে ৮জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগেও প্রথম ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ-সহিংসতায় অন্তত ২৮ জনের প্রাণহানি এবং ভোট বর্জনের ঘটনা ঘটেছিল।

এ সব সংঘর্ষে বেলা ১১টার মধ্যই রাজধানীর কেরানীগঞ্জে শিশু শুভ, যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ায় ফেরিওয়ালা আবদুস সাত্তার ও জামালপুরের শ্যামপুর ইউনিয়নে রফিকুল ইসলাম নিহত হন। সন্দ্বীপের বাউরিয়া ইউনিয়নে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিন জন।
নির্বাচনি সহিংসতায় সারাদেশে আহত হয়েছেন সহস্রাধিক ব্যক্তি।
ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট আর ব্যাপকহারে নির্বাচনী সহিংসতার কারণে অন্তত ২৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।
এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১১ জন।

কেরাণীগঞ্জ: দ্বিতীয় ধাপে শুরু হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কেরাণীগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ক্যাডারদের হামলা ও গুলিতে শাহিদুল ইসলাম শুভ (১০) নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এই ঘটনায় আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে হযরতপুর ইউনিয়নের মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিদুল ইসলাম ওই এলাকার ঢালিকান্দি গ্রামের আলাল মোল্লার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আয়নালের ক্যাডার রানা মোল্লার নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ জন অস্ত্রধারী কেন্দ্রে হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী রফিক মৃধা জানান, সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। হঠাৎ ১০ টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ক্যাডাররা কেন্দ্রে হামলা চালায়। এ সময় তারা ১০ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে স্থানীয় আলাল মোল্লার এক শিশু পুত্রসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশু শাহিদুল ইসলামকে স্থানীয় মডার্ণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।
বাকি আহতরা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। গোলাগুলির পর ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে বিজিবি উপস্থিত হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে ভোটাররা আতঙ্কে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়। এখন ঘটনাস্থলে অর্ধশতাধিক পুলিশ-বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় নোমেছা বেগম (৫০) নামে এক নারী নিহত হয়েছে। নিহত নারী ইমান আলীর স্ত্রী বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নে ৬ নং ওয়ার্ডের বিজয়ী মেম্বার প্রার্থী পরাজিত প্রার্থী শিপন শেখের সমর্থক ইমান আলীর বাড়িতে হামলা করে। এ সময় লাঠির আঘাতে নোমেছা বেগমের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। দৌলতপুর থানার (ওসি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইনুন নিশাদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সন্দীপ: ইউনিয়ন পরিষদ দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে সহিংসতায় সন্দ্বীপে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে। তারা হলেন, সানাউল্লাহ, জামাল ও ইব্রাহিম।
বৃহস্পতিবার বিকেল প্রায় ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছু পূর্বে দুই সদস্য প্রার্থী শাহেদ ও জামালের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করছিল। এ সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সানাউল্লাহ ও ইব্রাহিম এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে জামাল নিহত হন।

যশোর: যশোর সদরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আড়পাড়া ভোট কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় হাসান (৩০) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগকর্মী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর দুই ইউপি সদস্যপ্রার্থীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হন।
হাসানের পেটে ও বুকে গুলি লাগে। তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা গুরুতর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসানের বাড়ি যশোর সদরের শাহাপুর এলাকায়।
এ ব্যাপারে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন জানান, ভোট কেন্দ্রে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। তবে কেন্দ্রের বাইর সংঘর্ষ হয়ে থাকতে পারে।

জামালপুর: জামালপুরের মেলান্দহে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী সহিংসতায় রফিকুল ইসলাম (৫২) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত চারজন।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুরচর কেন্দ্রের বাইরে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় প্রাণ হারান রফিকুল ইসলাম।
জামালপুরের সহকারী পুলিশ সুপার ইউনুস মিয়া জানান, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা পার না হতেই ভোট স্থগিত করা হয়েছে। আজ সকালে দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের আড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়। তবে কিছুক্ষণ পরে ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ আবার শুরু হয়েছে।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ইউপি নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মতিন তোতা। সকাল সোয়া ৯টায় নির্বাচনে জাল ভোট প্রদান ও অনিয়মের অভিযোগ এসে তিনি সাংবাদিকদের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত জানান।
এছাড়া, মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার কুনতিপাড়া কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। আজ সকাল ৮টায় দ্বিতীয় দফার ভোট শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এ সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং স্বাভাবিক ভোটগ্রহণ চলতে থাকে ।

জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে মেলান্দহ উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের মামা-ভাগ্নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সাময়িক ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই মেলান্দহ উপজেলার ওই কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর ফলে ওই কেন্দ্রে সাময়িক ভোটগ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

চাঁদপুরের হাইমচরের একটি কেন্দ্রে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আওযামী লীগ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। চাঁদপুরের গাজীপুর, ঝিনাইদহের যাদবপুরে বিএনপি প্রার্থী এবং জামালপুরের ফুলকোচায় স্বতন্ত্রপ্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন।

এদিকে ভোট গ্রহণ শুরুর আগের রাতে ভোলা সদরের রাজাপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।