মালিকানার অতিরিক্ত জমি বিক্রি ও লিখে নিলে ৫ বছরের জেল!

মালিকানার অতিরিক্ত জমি বিক্রি ও লিখে নিলে ৫ বছরের জেল!

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো ব্যক্তি মালিকানার চেয়ে অতিরিক্ত জমি বিক্রির জন্য দলিল সম্পন্ন করলে এবং গ্রহীতা হিসেবে অতিরিক্ত জমি লিখে নিলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল বা ১০ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডিত হবেন। এমন বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২২’-এর খসড়া করেছে সরকার। শনিবার (২২ জানুয়ারি) খসড়াটি মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনের প্রাথমিক খসড়ায় ভূমি সম্পর্কিত ২২ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অপরাধের শ্রেণি ও মাত্রাভেদে কমপক্ষে ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।

এছাড়া একই অপরাধ আবার করার ক্ষেত্রে দ্বিগুণ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। এছাড়া বেশ কয়েক শ্রেণির অপরাধকে অজামিনযোগ্য হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া খসড়ায় জমির পরিমাণ ও অপরাধীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বর্ধিত সাজারও বিধান রাখা হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে বেশিরভাগ মামলা হয় ভূমিকেন্দ্রিক বিরোধের জেরে। ভূমি সম্পর্কিত অপরাধ ও বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিকারে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দীর্ঘ সময় বিচারাধীন থাকায় উভয় ক্ষেত্রে সৃষ্ট মামলাজট জনগণের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন এই ভোগান্তি নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রাথমিক খসড়ার বিষয়ে নাগরিক ও অংশীজনের প্রাপ্ত মতামতের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক খসড়াটি সংশোধন করে সংশোধিত খসড়া প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রমিতীকরণের জন্য পাঠানো হবে। পরে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর মধ্য দিয়ে আইন প্রণয়নের পরবর্তী ধাপ শুরু হবে বলেও জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

খসড়া আইন অনুযায়ী, ভূমি সম্পর্কিত ২২ ধরনের অপরাধের মধ্যে রয়েছে- অন্যের জমির মালিক হওয়ার উদ্দেশ্যে জাল দলিল তৈরি, মালিকানার অতিরিক্ত জমির দলিল সম্পাদন, মালিকানার অতিরিক্ত জমি লিখে নেওয়া, পূর্ব বিক্রয় বা হস্তান্তর গোপন করে কোনো জমি বিক্রি, বায়না করা জমি পুনরায় চুক্তিবদ্ধ হওয়া, ভুল বুঝিয়ে দানপত্র ইত্যাদি সৃজন, সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে প্রাপ্যতার বেশি জমির নিজ নামে দলিলাদি সৃষ্টি, সহ-উত্তরাধিকারীকে বঞ্চিত করে নিজের প্রাপ্যতার বেশি জমি বিক্রি, অবৈধ দখল, সহ-উত্তরাধিকারীর জমি জোরপূর্বক দখলে রাখা, অবৈধভাবে মাটিকাটা, বালি উত্তোলন ইত্যাদি এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা।

এছাড়া অপরাধের মধ্যে রয়েছে- বিনা অনুমতিতে ভূমির উপরের স্তর (টপ সয়েল) কাটা, অধিগ্রহণের আগে জমির মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত মূল্যে দলিল নিবন্ধন, জনসাধারণের ব্যবহার্য ও ধর্মীয় বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জমি দখল, বিনা অনুমতিতে পাহাড় বা টিলার পাদদেশে বসতি স্থাপন, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার কর্তৃক জমি ও ফ্ল্যাট হস্তান্তর ইত্যাদি সম্পর্কিত অপরাধ, সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জমি বেআইনিভাবে দখল এবং নদী, হাওর, বিল ও অন্যান্য জলাভূমির শ্রেণি পরিবর্তন।

অবৈধ দখল গ্রহণ ও দখল বজায় রাখতে পেশীশক্তি প্রদর্শন, সন্নিকটবর্তী ভূমি মালিকের ভূমির ক্ষতিসাধন ও অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা ইত্যাদিও খসড়া আইন অনুযায়ী ভূমি সম্পর্কিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

খসড়ায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি লাভবান হতে ব্যক্তি মালিকানাধীন বা সরকারি খাসভূমিসহ সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার মালিকানাধীন জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রিকরণসহ এর মালিকানা সংক্রান্ত যেকোনো জাল দলিল তৈরি করেন, তাহলে তিনি সর্বোচ্চ দুই বছরের তবে কমপক্ষে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোনো ব্যক্তি ভূমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদনকালে দাতা হিসেবে লাভবান হতে কোনো জমিতে মালিকানা ও দখল না থাকা সত্ত্বেও নিজেকে ওই জমির মালিক হিসেবে উপস্থাপন করে জাল দলিল সম্পাদন করেন বা তার মালিকানা ও দখলীয় জমির অতিরিক্ত জমি দলিলে লিপিবদ্ধ করেন, তবে তিনি ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এই অপরাধকে জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

এছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি ভূমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদনকালে গ্রহীতা হিসাবে লাভবান হতে কোনো জমিতে দাতার মালিকানা ও দখল না থাকার কথা জানা সত্ত্বেও দাতার মাধ্যমে তার মালিকানা ও দখলীয় জমির অতিরিক্ত জমি দলিলে লিপিবদ্ধ করান, তবে তাকে ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড পেতে হবে। এই অপরাধকেও জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে।