ধাক্কা দিলে আওয়ামী লীগ পড়ে যাবে, এত সহজ নয়: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক: ধাক্কা দিলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে পড়ে যাবে, এত সহজ নয় বলে জানিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘একটা কথা আমি বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে। কেউ আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিলো, আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেলো, এত সহজ নয়।’
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকলে বা কেউ যদি ভোট চুরি করে- তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো সেটা আওয়ামী লীগ পারে, এটা আমরা প্রমাণ করেছি। বার বার সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা নিজের দলে করি। দেশেও গণতন্ত্র চর্চা করি।’
বিএনপির কর্মসূচি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ (১০ ডিসেম্বর) নিয়ে। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়েও ১০ তারিখে তারা চলে গেলো গোলাপবাগে। সেটা আমি বলতে চাই না। সেখানে যেতে হলো। এখন আবার বলে ১১ তারিখ (বুধবার) থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার সঙ্গে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান। সব অতিরা এক জায়গায় হয়ে, আতি-পাতি নেতা হয়ে, তারা নাকি একেবারে ক্ষমতা থেকে আমাদের উৎখাত করবে।’
বিএনপির গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজ তারা (বিএনপি) নাকি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করে। তাদের জন্ম তো গণতন্ত্র থেকে হয়নি। হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী, সংবিধান লংঘনকারী মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে দল গঠন করা হয়েছিল সেই দল, এরা তো ভাসমান। এদের বাংলাদেশের প্রতি কেন দরদ থাকবে? সেজন্যই অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ হত্যা করতে পারে। হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে তারা আনন্দ পায়। দেশকে খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করে। এদের দেশের উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল, মেয়াদ শেষ হলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ২০০১ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। এর আগে ও পরে আর কখনো শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। খালেদা জিয়ার অধীনে হয়েছিল দুটি নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আর ২০০৬ সালের ৬ জানুয়ারি নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তো বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। বার বার যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, বিতাড়িত। তারা গণতন্ত্রটা চর্চা করলো কবে? তাদের নিজেদেরই গণতন্ত্র নেই। তাদের দলের কোনো ঠিকানা নেই। একটা মাইক লাগিয়ে, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে, দেশে-বিদেশে বসে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারাদিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবে। আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড, ইভিএম এসবই তো আমরা চালু করেছি। যেন মানুষ স্বাধীনভাবে তার ভোটটা দিতে পারে। ভোট দিয়ে যে রেজাল্ট আসবে সেটাই মেনে নেবো।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাদের সব নেতাকর্মীর মনে রাখা উচিত, এ নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন ওঠায় না। প্রশ্ন ওঠাতে পারে না। বিএনপিকে জিজ্ঞেস করলেই হয়, ২০০৮ সালে তারা কয়টা সিট পেয়েছিল? ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল। পরে বাই ইলেকশনে আরেকটা মিলিয়ে ৩০টা সিট। ওই নির্বাচন নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন নেই। তাহলে সেখানে মাত্র ৩০ সিট কেন পায়? এরপর তো আমরা ক্ষমতায় আসার পরে জনগণের স্বার্থে কাজ করেছি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন করেছি। এজন্যই আজকে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।
আগামীতে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইনশাআল্লাহ অব্যাহত থাকবে। জাতির পিতা এ বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন। তিনি শত্রুর বন্দিখানা থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। তাকে ১৫ আগস্ট হত্যা করা হয়। কিন্তু তার দেওয়া আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করেই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। পিতার কাছে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আজকের দিনে পিতা তোমায় কথা দিলাম- তোমার আত্মত্যাগ, শহীদদের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে বিশ্বের বুকে চলবে, আমরা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবোই।
১৪ বছরে দেশের সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ ১৪ বছর আগে দেশের অবস্থা কী ছিল, তা আজকের ছেলেমেয়েরা ভাবতেও পারে না। ১৪ বছর আগে দেশের মানুষের সবার হাতে মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ছিল না। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল, সবার হাতে হাতে মোবাইল, ইন্টারনেট। আমর ইউনিয়ন পর্যন্ত ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে যে কথা বলে, যে ওয়াদা করে তা পূরণ করে। আমরা জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণ করেছি।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করেছিলাম। কিন্তু সেই বিজয়ের আনন্দ তখনো ছিল অধরা। বাঙালির মুখে কিন্তু সেই রকম হাসি ফোটেনি। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দেশে ফিরে এলেন, সেই দিনই যেন আমাদের বিজয় সম্পূর্ণ হলো। স্বাধীনতা অর্জনটা স্বার্থক হলো।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তৃতা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আলোচনায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, খ্যাতনামা নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।