‘তেঁতুল হুজুরের’ সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সখ্যে রিজভীর হতাশা
ঢাকা: নারী বিদ্বেষসহ নানা বিতর্কিত ভূমিকার জন্য বিভিন্ন সময় সরকারের মন্ত্রীদের কাছে সমালোচিত হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভোটের জন্য সখ্য গড়ছেন মন্তব্য করে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলছেন, “যে আহমেদ শফীকে এতো বিরক্ত করেছেন, যে আলেম-ওলামাকে উনি ব্যঙ্গ করেছেন, বিদ্রুপ করেছেন, তাদের যে সমাবেশ হয়েছিল, সেই সমাবেশে কত লোককে হত্যা করা হয়েছে। এখন আবার তার (হেফাজত) সাথেই সখ্য করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। হায়, এমনটি এর আগে আমরা দেখিনি!”
শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে আত্মপ্রকাশ করা কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজত রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনায়-সমালোচনায় আসে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতা করে। ব্যাপক সমালোচিত হয় যখন শাপলা চত্ত্বরে আন্দোলনের নেপথ্যে কারণ হিসেবে জামায়াতের ইন্ধন ও চুক্তির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায়।
ওই বছর ৫ মে তারা মতিঝিলের শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ করে, যাতে সমর্থন যুগিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা। মধ্যরাতে পুলিশি অভিযানে হেফাজত কর্মীরা ঢাকা ছাড়লেও আলোচনায় থেকে যায় তারা।
এরপর নারীদের ‘তেঁতুলের’ সঙ্গে তুলনা করে সরকারের মন্ত্রী, নারী অধিকার কর্মী ও সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন অঙ্গন সমালোচনায় বিদ্ধ হন হেফাজত আমির শফী। সর্বশেষ তারা মাঠ গরম করে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সম্প্রতি স্থাপিত একটি ভাস্কর্য অপসারণের দাবিতে।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার গণভবনে শাহ আহমদ শফীসহ কওমির ওলামাদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে তাদের ওই দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ভাস্কর্যটি অপসারণে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশপাশি কওমির সনদকে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন তিনি।
বামধারার দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই অবস্থানকে দ্বিচারিতা বলছেন জামায়াতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় দলের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।
রোববার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘অর্পণ বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনার মন্ত্রীরা তেঁতুল হুজুর, কত কী আজে-বাজে মন্তব্য করলেন। এখন আপনি যাচ্ছেন তার সাথে সখ্য করতে। কারণ দেখেছেন যে, এদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী এই সরকারের সাথে নেই। সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনে তো ভরাডুবি হবে। অতত্রব এখন তিনি কিছুটা ভোটের আশায় ইসলামী আলেম-ওলামাদের সাথে দেখা করছেন, কথা-বার্তা বলছেন।
“ভারতের সাথে চুক্তি-টুক্তি করে আসার পরে তিনি দেখেছেন যে, পরিস্থিতি তো ভালো না। এখন মুসলিম ভোট হাতে নেওয়ার জন্য নানা প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।”
তবে তার এসব কর্মকাণ্ডে মানুষের ‘মন ভিজবে না’ দাবি করে রিজভী বলেন, “ভোট আসলে আপনারা দেখেছেন, উনি হিজাব পরছেন, হাতে তসবিহ নিচ্ছেন, যেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাচ্ছেন তথনই উনি নিজেকে প্রগতিশীল দেখানো মুরু করেন, প্রকৃত অর্থেই তিনি কোনো ধর্ম মানেন না, তিনি একজন ধর্ম নিরপেক্ষ ব্যক্তি। ভোটের সময়ে তিনি কিন্তু পুরো পাক্কা মসুলমান হওয়ার চেষ্টা করেন। এটা হচ্ছে দ্বিচারিতা, চূড়ান্ত ভণ্ডামি।”
‘অর্পণ বাংলাদেশ’ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দরিদ্র এবং বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘নির্যাতনে’ ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে। ২০১৫ সাল থেকে তারা এ কাজ করছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
সংগঠনের সভানেত্রী বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, আবদুল্লাহ হিল কাফি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।