স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই
ঢাকা: অনেকে মনে করে থাকেন গরু মোটা-তাজাকরণে যে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে কোরবানি এলে এ ধরণের কথা বেশি প্রচার হতে দেখা যায়। কিন্তু আসলে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যাবহারে গরু বা মানুষের জন্য কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত?
ঢাকা কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের প্রধান ভেটেরিনারিয়ান এ বি এম শহীদুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেছেন, পশু মোটা-তাজাকরণ বা গ্রুথ হরমোন বাড়ানোর জন্য যে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা সহনীয় পর্যায়ে। এতে গরুর কোনো ক্ষতি হয় না এবং মানুষের শরীরের জন্যও কোনো ক্ষতি নেই।
কারণ এই ধরনের ওষুধ গরুকে খাওয়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এছাড়া ৭৭ কেজি মাংসের মধ্যে যে পরিমান স্টেরয়েড থাকে তার সমপরিমান স্টেরয়েড থাকে একটি ডিমে।
অন্যদিকে প্রাকৃতিকভাবে কিছু সবজি আছে যার মধ্যে প্রচুর স্টেরয়েড থাকে। কিন্তু এতে তো আমাদের শরীরের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বরং উপকারই হচ্ছে। তবে পশুকে সহনীয় মাত্রার অধিক স্টেরয়েড দিলে পশুর বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : গরুর মধ্যে ল্যাথারজিক ভাব দেখা দিতে পারে, খাওয়ায় অরুচি চলে আসবে, অবসাদগ্রস্থ মনে হবে, শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে গরুর পেছনের দিকটা একটু নাদুস-নুদুস মনে হবে।
কিন্তু তিনি দাবি করেন এ ধরনের গরু একশ’র মধ্যে তিনটা পাবেন। কারণ বর্তমানে সরকারিভাবে পাঁচ লাখ গরুর খামার আছে। এ সব খমারে গরুকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যেমন: ডেক্সামেথাসন বা ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন খাওয়ানো হয় না।
তবে অনেকে অধিক মুনাফার লোভে এই ধরনের ওষুধ খাওয়ান এতে প্রকৃত পক্ষে গরু তেমন মোটা হয় না বরং শরীরে পানি জমে যায়। তারা এই কাজ করে তিন মাস ব্যাপী। কিন্তু প্রকৃত খামারিরা এক বছর মেয়াদে গরুকে বিভিন্ন সুষম খাদ্য দিয়ে থাকেন এতে করে গরু সহজে মোটা-তাজা হয়।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে গ্রুথ হরমোন প্রতিদিন একটি গরুকে ২০ থেকে ৩০ মিলি গ্রাম ব্যবহার করা হয়। এতে গরুর শরীর কিছুটা উন্নত হয়। মাংসের ভেতর ফ্যাট বাড়ে। যাকে মোবলিং অব মিট বলা হয়। এতে মাংসের স্বাদ এবং ঘ্রাণ সুন্দর হয়। মানুষের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না। আমাদের দেশে এই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি নেই।
কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের এই প্রধান ভেটেরিনারিয়ান বলেন, আমাদের দেশে অনেকে বলে থাকেন এই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে মানুষের অতিরিক্ত মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
তারা এই বিষয়ে জ্ঞানের অভাবের এমন বিভ্রান্তকর তথ্য দিচ্ছেন। তারা কোনো গবেষণামূলক প্রমাণ দেখাতে পারেননি এবং পারবে বলেও আমি মনে করি না। আমরাও অনেক গবেষণা করে দেখেছি এতে মানুষের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই।