থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করবে সরকার

ঢাকা: বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবার থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের সঙ্গে নতুন সমঝোতা চুক্তি  করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে নতুন করে চাল আমদানির এ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরই মধ্যে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে (জি টু জি) বাণিজ্যচুক্তির আওতায় চাল আমদানি করা হবে। ঢাকায় চলমান বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দুই দিনের চতুর্থ জয়েন্ট ট্রেড কমিটির (জেটিসি) সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দুই দিনের জেটিসি সভাটি রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে চলছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় একই স্থানে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দুই দিনের সম্মেলন শেষ হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানির বিষয়ে যে চুক্তি করা হবে, তার খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। তবে খসড়ায় এই চুক্তির আওতায় কী পরিমাণ চাল আমদানি করা হবে তা চূড়ান্ত করা হয়নি।

যদিও মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আর মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা ও জনসংযোগ কর্মকর্তা সুমন মেহেদী রাইজিংবিডিকে বলেছেন, থাইল্যান্ডের সঙ্গে বড় ধরনের চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। সেক্ষেত্রে চুক্তিটি পাঁচ বছর মেয়াদী হতে পারে। তবে সব চূড়ান্ত হবে আগামীকালের বৈঠকে।

তিনি জানিয়েছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে চাল আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

এদিকে দুই দেশের মধ্যকার চাল আমদানি-রপ্তানি চুক্তির বিষয়ে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে থাইল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্ট ডটকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ জরুরি ভিত্তিতে থাইল্যান্ড থেকে ২ লাখ টন চাল আমদানি করবে।

থাইল্যান্ডের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠনের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, থাইল্যান্ড থেকে দুটি ভিন্ন মানের চাল কিনতে চায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫ শতাংশ সাদা চালের প্রতি টনের জন্য ব্যয় করতে হবে ৪১০ ডলার। আর শতভাগ সাদা চালের প্রতি টনের জন্য ব্যয় করতে হবে ৪৩৯ ডলার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসলের ক্ষতি এবং সরকারি গুদামের মজুদ কমে আসার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে ৯০৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় আড়াই লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি গত ১৪ জুন দরপত্র ছাড়াই সরকারি পর্যায়ে এই চাল আমদানির অনুমতি দেয়।

এর মধ্যে গত ১৩ জুলাই প্রথম চালানে ২০ হাজার টন চাল নিয়ে একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। গত ১৭ জুলাইয়ে ২৭ হাজার টন চাল নিয়ে একটি জাহাজ আসে। গত ২২ জুলাই তৃতীয় চালানের চাল বাংলাদেশে পৌঁছায়।

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, সরকারি মজুত বাড়াতে প্রাথমিকভাবে পাঁচ দেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। মোট ১২ লাখ টন চাল আনার লক্ষ্য নিয়ে ইতিমধ্যে তিনটি দেশের সঙ্গে আমদানির আলোচনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভিয়েতনামের সঙ্গে আড়াই লাখ টনের পর গত মাসেই থাইল্যান্ডের সঙ্গে ২ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি করে খাদ্য অধিদপ্তর।

জানা গেছে, চাল সরবরাহের ব্যাপারে আলোচনা ও দাম নির্ধারণ করতে গত ১৬ জুলাই ভারতের একটি প্রতিনিধিদল এবং ২৮ জুলাই থাইল্যান্ডের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা আসে। তাদের সঙ্গে বসে দরদাম ঠিক করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তি বা জিটুজি ভিত্তিতে চাল আনার সিদ্ধান্ত হয়।

এ ছাড়া কম্বোডিয়া চাল রপ্তানির ব্যাপারে সমঝোতা চুক্তির খসড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছে বলেও জানা গেছে।