ঋণে সুদের হার কমায় বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে

ঢাকা: ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নেমে আসলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে এবং তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দৃঢ় ভিত্তি দেবে বলে অর্থনীতিক, ব্যাংকার ও ব্যবসায়িরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ এর ডিসেম্বরে সকল ব্যাংকের ঋণের সুদের গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী ২০১৫ সালের একই সময়ে ছিল ২০১৫ সালে ছিল ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. আকতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণে সুদের হার কমাতে অব্যহতভাবে তাগিদ দেয়ায় অধিকাংশ ব্যাংক তাদের ঋণে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়িদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে মুদ্রানীতিতে বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছে।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অন্যতম উপাদান, ২০১৬ এর ডিসেম্বরে পর্যন্ত ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ঋণের হার নিম্নগামী হওয়ায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিওও এম হাশেম চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের স্বচ্ছ গ্রাহকদের ঋণে ৯ শতাংশ সুদের প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি, মুদ্রা বাজার ও কলমানি মার্কেটের মাধ্যমে সুদের হার কমিয়ে আনতে ব্যাপক অবদান রাখছে।

অপরদিকে সাউথ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (এসইবিএল)-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল কাশেম চৌধুরী বলেন, তৈরি পোষাক ও টেক্সটাইল খাতের মত স্পর্শকাতর বিভিন্ন বড় ঋণ গ্রহীতাদের জন্য আমরা ৯ শতাংশ হারে ঋণের প্রস্তাব দিয়েছি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুদের হার নিম্নমুখী হওয়ার বিনিয়োগের গতি বৃদ্ধি করবে। বেসরকারি খাতের বিকাশে এ সময় তিনি, বিদ্যুত, গ্যাস ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদানের উপরও জোর দেন।

এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মতলুব আহমদ বলেন, সকল খাতের জন্যই সর্বোচ্চ ঋণ সুদের হার ৯ শতাংশ হওয়া উচিত। কিন্তু কিছু ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে, যা অযৌক্তিক। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী বছেরে একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী, সোনালী, রূপালী, জনতা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে চারটি ব্যাংক এক অঙ্কে রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংক সবচেয়ে কম ৬ শতাংশ সুদ নিচ্ছে, যা পূর্ববর্তী বছরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সুদের হার ৯ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৫ টির গড় সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুদের গড় হার ২০১৬ এর ছিল ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা এর আগের বছর একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
বিদেশি ব্যাংকগুলোও দেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগীতায় তাদের ঋণের হার কমিয়ে এনেছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদের হার ২০১৬ এর ডিসেম্বরে ছিল ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।