লোকসান বাড়ছে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রর

ঢাকা: বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রর জ্বালানি সংগৃহীত হয় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য থেকে অনেক বেশি দামে এ খনি থেকে কয়লা কিনতে হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ব্যবহূত প্রযুক্তিও বেশ পুরনো। ফলে বড়পুকুরিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর স্বাভাবিক ব্যয়ের দ্বিগুণ। এতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরিচালন ব্যয়ও বাড়ছে, যার প্রভাব পড়েছে এর আয়ের ওপর।

বড়পুকুরিয়ায় দেশের একমাত্র তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০৬ সালে গড়ে ওঠে। ১২৫ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট মিলে মোট উৎপাদনক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট। তবে এখান থেকে সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। পুরনো প্রযুক্তি ও যান্ত্রিক অদক্ষতার কারণে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদিত হচ্ছে না বিদ্যুৎ।

এদিকে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রয়েছে ধারাবাহিক লোকসানের চক্রে। সর্বশেষ অর্থবছরেও কেন্দ্রটি প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা কেনার কারণে এ লোকসান গুনতে হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে বড়পুকুরিয়া খনির প্রতি টন কয়লার মূল্য ছিল ৬০ ডলার। কিন্তু ২০০৮ সালে তা বাড়িয়ে করা হয় ৭১ ডলার ৫০ সেন্ট। এর পর ২০১২ সালে তা আরো বাড়িয়ে ১০৫ ডলার করা হয়। এ দাম ২০১৫ সালে পৌঁছায় ১৩০ ডলারে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার বর্তমান মূল্য টনপ্রতি মাত্র ৪৫ ডলার। আর ২০১০ থেকে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কখনই টনপ্রতি ৮০ ডলারের উপরে ওঠেনি। ফলে বাড়তি দামে কয়লা ক্রয় করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে। এতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়, যার প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পরিচালনায়।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৬তম বৈঠকের আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে।

বৈঠকে কার্যপত্রে বলা হয়, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অংশগ্রহণ না করে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের আরেকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে এককভাবে জ্বালানি বিক্রয় বিধিসম্মত নয়। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এজন্য স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দর নির্ধারণের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে অত্যন্ত পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দক্ষতা কম। ফলে এর উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কেন্দ্রটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কয়লার দাম নির্ধারণের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে আলোচনার জন্য বলা হয়েছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯ লাখ ৪১ হাজার কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এতে ব্যয় হয় ৬৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি ব্যয় হয় ৬ টাকা ৭০ পয়সা। এর মধ্যে শুধু কয়লা বাবদই ব্যয় হয় ৫ টাকা ৩ পয়সা। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দক্ষতাও কম। গত অর্থবছরে বেশ দক্ষতার হার ছিল মাত্র ২৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর প্লান্ট ফ্যাক্টর ছিল ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এর সক্ষমতার মাত্র ৪৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিল।