প্রযুক্তিচালিত জীবনের তথ্য সংকট

আইটি ডেস্ক: আমাদের জীবনটা যেন ছোট্ট একটি দ্বীপের নিঃসঙ্গ নারিকেল গাছের মত! চারিপাশে উত্তাল সমুদ্র। তীব্র বাতাসে খেই হারিয়ে ফেলি, কোথায় যাবো। এই রূপকচিত্রের সাথে আধুনিক জীবনধারার অনেক মিল। যেকোন বিষয়ে তথ্য এখন আক্ষরিক অর্থেই আমাদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই তথ্যের পরিমাণ এতই বিশাল, যাকে তুলনা করা যেতে পারে মহাসাগরের বিশাল জলরাশির সাথে। এতসব তথ্যের মধ্যে সঠিকটি খুঁজে নেয়া একটা বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। দেখা গেলো কোন একটি পণ্য কেনার আগে গুগলিং করলেন, তাতে পণ্যটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ দু রকম তথ্য এলো। একটি আকাশচুম্বী প্রশংসা, অন্যটি গগনস্পর্শী নিন্দা। এই ডিলেমার মধ্যে কীভাবে সঠিক তথ্যটি বেছে নেবেন? আধুনিক নগর জীবনে প্রতিনিয়ত আমাদের এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

শুধু যে এই বিপরীতধর্মী মতামত আমাদের বিভ্রান্ত করছে তা নয়। অসংখ্য বিকল্প থেকে একটি বেছে নিতে গিয়েও আমরা কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি। ধরা যাক আপনি একটি ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিস্টেম কিনতে চান। সার্চ দিলে অসংখ্য রেজাল্ট এলো যার প্রতিটিতেই নিজস্ব পণ্য সম্পর্কে ভালো ভালো কথা লেখা। আপনি কোনটা বেছে নেবেন?

Too many choices can lead to no choice!
দায়টা আমাদেরও। আমরা সবসময় নতুন কিছু খুঁজছি, আপডেটেড ভার্শন ব্যবহার না করলে আমাদের স্ট্যাটাস থাকে না। আর এরই প্রভাব পড়ছে বাজারে। জীবন ক্রমশ হচ্ছে পণ্যশাসিত। একাগ্রতা হারিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে আমাদের মন।
কীভাবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
() ছোট্ট তালিকা ব্যবহার করুন
আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্যে জীবনাচারে খানিকটা পরিবর্তন আনুন। অনলাইন বা অফলাইন জীবন, দু ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তনটা দরকার। ১০টার জায়গায় দুটো ব্লগ পড়ুন, ৫ পদের বদলে ১ পদ খান। এই বিশাল পণ্যশাসিত সমাজ থেকে খানিকটা দূরে সরে থাকুন। এই চর্চা অব্যাহত রাখলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনার একটি আলাদা অভ্যাস তৈরি হবে। কোন কিছু খেতে বা পরতে গেলে বিভ্রান্ত হবেন না।
() বিভ্রান্তিকে বিদায় করুন
ছোট্ট তালিকা ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হবার পর এবার নতুন একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকে। তালিকার মধ্যে যেসব জিনিস আপনাকে বিভ্রান্ত করছে সেগুলো কে ছেটে ফেলুন। মানে একদম চিরতরে বিদায় করে দিন। শুরুতে ব্যাপারটা কঠিন লাগতে পারে, তবে এটা অত্যন্ত জরুরী।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার কথাই ধরা যাক। ওজন কমানো আর সুস্থতার জন্য আপনি হয়তো এ কদিন বেশি করে নিরামিষ খেয়েছেন। এবার পুরোপুরি নিরামিষাসী হয়ে যান। বাসা থেকে সমস্ত মাছ-মাংস সরিয়ে ফেলুন। কোথাও নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গেলে আপনার জন্যে ভেজিটেবল রাখতে বলুন। রেস্টুরেন্টে গেলে আমিষ মেনুর দিকে ভুলেও তাকাবেন না। মনে রাখবেন, Out of sight, out of mind.
() অঙ্গীকার
এবার আর নতুন কিছু না। এই পর্যায়ে দরকার শুধুই আপনার কমিটমেন্ট। নতুন অভ্যাসগুলো আত্মস্থ করুন, এর মাঝে লুকোনো আনন্দ, অভিযান আর উদ্দীপক ব্যাপারগুলো অন্বেষণ করুন। দেখবেন অল্প কিছু থেকেও কত না সুখ আহরণ করা যায়! তাহলে কেন খামোখা দেখানোপনা করে বিশাল পণ্যরাজির ভোক্তা হবেন?
Sometimes less really can be more.
() কাঙ্খিত মান অর্জন করতে পেরেছেন কি?
কেমন কাটছে দিন? নতুন অভ্যাসের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন তো? আপনার খাদ্যাভ্যাসের কথাই ধরা যাক। এটি থেকে আপনি এনার্জি পাচ্ছেন? চর্বি ঝরিয়েছেন? রুচি পাচ্ছেন? হলে তো খুবই ভালো। আর না হলে পছন্দ অনুযায়ী কিছু রদবদল করুন। যেমন, চাইলে সপ্তাহে এক বেলা মাছ রাখতে পারেন ডায়েটে। অথবা একটি প্রোটিন সস হয়তো দরকার হতে পারে আপনার। এভাবে নতুন অভ্যাস চালু করুন।
অনলাইন জীবনের ক্ষেত্রে, হয়তো বা আপনি যে নিউজ ব্লগটি ফলো করছেন তাতে আপনার চাহিদা মিটছে না। সেক্ষেত্রে কোন প্রযুক্তি ব্লগ বা কমিউনিটি ব্লগেও ঢু মেরে দেখতে পারেন।
প্রযুক্তিকে এড়িয়ে চলা অসম্ভব। আবার প্রযুক্তির ওপর অতি নির্ভরতাও সুফল এনে দেয় না। তাই প্রযুক্তিকে আশীর্বাদ হিসেবে পেতে চাইলে এর সুষ্ঠু ব্যবহার করা আবশ্যক। তবেই জীবন হবে গতিময় এবং সাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।