এনার্জি ড্রিংকসের নামে মাদক ও বিষ সেবনে বুঁদ দেশবাসী

কর ফাঁকি দিতে এনার্জি ড্রিংকস হয়ে গেছে কোমল পানীয়। ২৪ ব্র্যান্ডে মিলেছে মাদকের উপাদান এবং একান্তবাস উত্তেজক ভায়াগ্রার উপাদান। বিএসটিআইয়ের ভুয়া লাইসেন্সে বিক্রি হচ্ছে ২৭টি ব্র্যান্ড।

দেশে তৈরি কথিত এনার্জি ড্রিংসের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যবস্থা নেই বলে সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।মন্ত্রী জানিয়েছে, বাজারে প্রচলিত এনার্জি ড্রিংসের কোনো বাংলাদেশ মান (বিডিএস) নেই এবং বিএসটিআই থেকে পণ্যের অনুকূলে গুণগত মান সনদ নেয়ার জন্য সরকার নির্ধারিত ১৫৫টি বাধ্যতামূলক পণ্যের আওতায়ও এনার্জি ড্রিংস পড়ে না। এনার্জি ড্রিংস পণ্যটি সফট ড্রিংস পণ্যের শ্রেণিভুক্ত নয় বলেও জানান তিনি।

সরকার দলীয় এক সাংসদ একই দিনে জানায়, শক্তি সঞ্চয়ের নামে মানবদেহে ভয়ঙ্কর রোগের বাহক ঢোকাচ্ছে এনার্জি ড্রিঙ্কস; ২৪টি ব্র্যান্ডে মিলেছে মাদক উপাদান; বিএসটিআইয়ের ভুয়া লাইসেন্সে বিক্রি হচ্ছে ২৭টি ব্র্যান্ড; মেশানো হচ্ছে যৌন উত্তেজক ভায়াগ্রার উপাদান; কর ফাঁকি দিয়ে এনার্জি ড্রিংস হয়েছে কোমল পানীয়।
শিল্পমন্ত্রী জানান, এ পণ্যে উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন, অপিয়ম থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএসটিআই থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে এনার্জি ড্রিংকসের নামে বিষ ও মাদক এবং একান্তবাস উত্তেজকের বিষয়টি সরকারের নীতি-নির্ধারক মহল তথা জাতীয় সংসদে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও এর উপর কেন নিষেধাজ্ঞা বসছেনা? কেন এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন ও বিপনন বন্ধ হচ্ছেনা? কেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী শুধু মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে অনুরোধ জানাবেন? কেন শক্ত নির্দেশ দিবেন না? কেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না।
এই নেশাজাতীয় উত্তেজক এনার্জি ড্রিংকসে সয়লাব হয়ে গেছে দেশ। মানহীন এসব পানীয় পান করে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। এই এনার্জি ড্রিংকস সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে বলে যুবসমাজ এই মরণ নেশার দিকে ঝুঁঁকে পড়ছে। যে কারণে একই নামে বাজারে একাধিক এনার্জি ড্রিংকস বিক্রির প্রতিযোগিতায়ও নেমেছে কয়েকটি কোম্পানি। বৃহদাকারের পাশাপাশি এখন ক্ষুদ্র পরিসরে ছোট্ট একটি রুমেই গোপনে নেশাজাতীয় এনার্জি ড্রিংকস তৈরি করা হচ্ছে। র‌্যাব-পুলিশ এ ধরনের বেশ কয়েকটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নেশাজাতীয় এনার্জি ড্রিংকস উদ্ধার করেছে গত এক বছরে।
চিকিৎসকদের মতে, এনার্জি ড্রিংকসে মাদকের উপাদান সেনেগ্রা ও ভায়াগ্রা শরীরে উত্তেজনা তৈরি করে। স্বাভাবিক ও সুস্থ মানুষের জন্য সহনীয় হলেও যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল তাদের ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত মাত্রার ক্যাফেইন ডায়াবেটিসের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। এনার্জি ড্রিংকস একান্তবাস শক্তি হ্রাস, হৃদরোগ ও কিডনির ক্ষতির মারাত্মক কারণ হতে পারে বলে চিকিৎসকরা একে মারাত্মক ‘বিষ’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন। তবে বাজারে বিক্রি হওয়া পানীয়গুলোর কোনো-কোনোটির বোতলের গায়ে লেখা আছে, ঔষধি গুণসম্পন্ন, হৃদরোগ প্রতিরোধক, একান্তবাস শক্তি বাড়ায়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কমায়। ক্রেতা আকর্ষণ করতেই ব্যবসায়ীরা এই পন্থা অবলম্বন করছে।
এনার্জি ড্রিংকসের লাইসেন্স দেয়ার কোন কর্তৃপক্ষ নেই। এরপরও আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে এ ধরনের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ স্ট্র্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) লোগো ব্যবহার করে সাধারণ নাগরিকদের ধোঁকা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ব্যবসা করে আসছে। কখনো কখনো বিএসটিআই’র কোনো লোগো ছাড়াই বাজারজাত করা হচ্ছে এ ধরনের পানীয়।
বিএসটিআই ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাসায়নিক পরীক্ষায় এ ধরনের একাধিক কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকস ও পানীয়তে অ্যালকোহলের অস্তিত্ব পেয়েছে। কোম্পানিগুলোর শক্তির কাছে অনেক ক্ষেত্রেই আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো- এমন অভিযোগ রয়েছে। বিএসটিআই ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেছেন, এনার্জি ড্রিংকসের নামে এ দু’টো সংস্থাতো বটেই, সরকারের কোনো সংস্থাই লাইসেন্স প্রদান করে না। অথচ এরপরও বাজারে অনেকগুলো কোম্পানির এনার্জি ড্রিংকস পণ্য রয়েছে। যার কোনোটিতে রয়েছে সরাসরি মাদকের অস্তিত্ব। অনেক বেভারেজ কোম্পানির পানীয়তে অ্যালকোহল না মিললেও রয়েছে ক্যাফেইন ও একান্তবাস উত্তেজক সিনডেনাফিল সিট্রেইট। যা নিয়মিত পানে অঙ্গহানীসহ দুরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকি রয়েছে।
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের (ডিএনসি) একজন কর্মকর্তা জানান, এনার্জি ড্রিংকস বা বেভারেজে মাদকের অন্যতম উপাদান ভায়াগ্রা ও সেনেগ্রা মেশানো সম্পূর্ণ বেআইনি। তরুণদের আকৃষ্ট করতে কেউ কেউ এটা করে থাকে। ক্যাফেইনের মাত্রাও ১৪৫ মিলিগ্রামের বেশি হলে সেটা মাদকে পরিণত হয়। এর চেয়ে অনেক বেশি মাত্রার ক্যাফেইন পাওয়া গেলে তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু রাসায়নিক পরীক্ষায় কোনো-কোনোটিতে ২৭০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে এনার্জি ড্রিংকসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন করে অতিরিক্ত কর আরোপের পর কৌশল পাল্টে ফেলে অসৎ কিছু উৎপাদক। এতদিন ধরে বড় হরফে বাজারে যেসব এনার্জি ড্রিংকস বিক্রি হতো তার নাম পাল্টে রাখা হয়েছে ‘কোমল পানীয়’।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশেষ চক্র দেশের বিভিন্ন স্থানে কারখানা খুলে কথিত এসব এনার্জি ড্রিংকস তথা কোমল পানীয় উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জে বাজারজাত করেছে।
এতে উঠতি বয়সের ছেলেরাসহ যুবকরাই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। দেশে এভাবে একটা উপার্জনক্ষম কর্মশক্তি ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী একটি দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ নেশার দ্রব্য অবাধে প্রবেশ করিয়ে এদেশের উপার্জনক্ষম পুরুষ ও যুবশক্তিকে যড়যন্ত্রমূলকভাবে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।
মূলত, মাদকের বিরুদ্ধে পবিত্র ইসলামী অনুভূতি ও প্রচার এক সময় জোরদার ছিল। কিন্তু ইদানীংকালে ধর্মব্যবসায়ী মালানাদের অপতৎপরতা সে মূল্যবোধকে নিস্তেজ করে দিয়েছে। হালে সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ক্বওল শরীফ ও উনার লেখনী মুবারক সে অবলুপ্ত অনুভূতিতে জাগরণ তৈরি করছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি শুধু তাত্ত্বিক ফতওয়া মুবারকই দিচ্ছেন না; পাশাপাশি দিচ্ছেন মাদক থেকে বিরত হওয়ার বেমেছাল রূহানী কুওওয়াত। যা মাদকসেবীদের আনন্দের সাথেই মাদক থেকে বিরত রাখছে।