মাদকাসক্তের জরিপ: বেশিরভাগ নারীর মাদকাসক্তির কারণ পারিবারিক অশান্তি
ঢাকা: পারিবারিক অশান্তির কারণে মাদক গ্রহণের দিকে ঝুকছে বেশিরভাগ নারী। যার হার ৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া বন্ধুদের প্ররোচণায় ৩৩ শতাংশ মাদক গ্রহণ শুরু করে। নারীদের মধ্যে শতকারা ৩৪ শতাংশ মানসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে আরো জানানো হয়, নারী মাদকাসক্তের মধ্যে ৮৪ শতাংশ নারী পারিবারের সদস্যদের চাপে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। তাদের মধ্যে মধ্যে ৪৩ শতাংশ ইয়াবাসেবী। আর বিবাহের আগে যৌন সম্পর্কীয় অভিজ্ঞতা আছে ২৯ শাতংশ নারীর। এদের মধ্যে একাধিক যৌন সঙ্গী আছে ২৩ শতাংশ রোগীর।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনে নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা ২৬৩ জন নারী রোগীর মধ্যে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
তিনি জানান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনে চিকিৎসা নিতে আসা ২৬৩ জন পুরুষ রোগীর মধ্যে পরিচালিত জরিপের দেখা গেছে ৪০ শতাংশ তারা কোনো না কোনো সময় এলকোহল/মদ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ফেন্সিডিল ২৫ শতাংশ, গাঁজা ৩৮ শতাংশ, ইয়াবা ৪১ শতাংশ ও হেরাইন গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭ শতাংশ। এদের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণ করে মাত্র ৫ শতাংশ।
অর্থাৎ দেশে আশঙ্কাজনকভাবে ইয়াবার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে হেরোইন জাতীয় মাদকের ব্যবহার কমছে। আর দেশের অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান প্রবেশ করে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে।
এসব মাদক গ্রহণকারীরা অ্যালকোহলের ওপর নির্ভরশীল না হলেও তারা কোনো না কোনো সময় অ্যালকোহল ব্যবহার করেছে বলে প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়।
যেসব রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের ২৫ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ না কেউ মাদকগ্রহণকারী। অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের মাদকগ্রহণ এসব রোগীর মাদক শুরু করতে উৎসাহ জুগিয়েছে আবার পরিবারের এ সব সদস্যরা রোগীদের সুস্থ্যতার পথে অন্তরায়।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বন্ধু-বান্ধবের প্ররোচণার চাইতে নিজের আগ্রহে মাদকগ্রহণের প্রবনতা বেশি। অর্থাৎ বন্ধুদের প্ররোচণায় ৩৭%, নিজের আগ্রহে ৪২% এবং পারিবারিক অশান্তির কারণে ২২% মাদকগ্রহণ শুরু করে।
মানসিক রোগের চিকিৎসা নিচ্ছে ৪১% রোগী, বিবাহের পূর্বে যৌন সম্পর্কীয় অভিজ্ঞতা আছে ৫৩% এবং একাধিক যৌন সঙ্গী ৩৩% রোগীর।
কখনো না কখনো মাদকদ্রব্য গ্রহণের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন ৩৫% রোগী এবং মামলা হয়েছে ১৭% রোগীর বিরুদ্ধে।
জরিপি আরো বলা হয়, চিকিৎসাগ্রহণ করতে আসা ২৬৩ রোগীর মধ্যে ৭৩% রোগী পরিবারের সদস্যদের চাপে চিকিৎসা গ্রহণ করছে। অপরদিকে স্বেচ্ছায় বা নিজের আগ্রহে চিকিৎসা নিতে এসেছে মাত্র ১৪% এবং বাদবাকিরা বিভিন্ন কারণে।
আগামীকাল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপনকে সামনে রেখে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উপপরিচালক ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ইকবাল মাসুদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট অ্যাডিকশন প্রফেশনাল ডা. আক্তারুজ্জামান সেলিম, আমির সাজু ও আব্দুল আওয়াল, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উপপরিচালক ইকবাল মাসুদ এবং অ্যাডিকশন প্রফেশনাল জাহিদ ইকবাল গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।