বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে পাটকল বন্ধ করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে একের পর এক পাটকল বন্ধ করে পাটকে ধ্বংস করে দিয়েছিল বিএনপি। সোনালি আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে তাঁর সরকার অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবস ও বহুমুখী পাটপণ্য মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি পাটশিল্পকে অবহেলা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে একটা চুক্তি সই করে। এই চুক্তিতে ছিল কী? তারা বাংলাদেশের পাটকলগুলো একে একে বন্ধ করে দেবে। ঠিক একই সময় বিশ্বব্যাংক ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করে নতুন নতুন পাটকল তৈরি করার জন্য। পার্লামেন্টে আমি এবং আমরা অনেকে এ বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলাম যে আড়াই লাখ বেল পাট রফতানীর মার্কেট যদি বিদেশে থেকে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের কেন পাটকল বন্ধ হবে? আর ভারত কেন নতুন পাটকল করার সুযোগ পাবে?’

প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলেছিলাম, আমাদের তো সব সময় ভারতের দালাল বলেন। কিন্তু এই দালালির যে একটা জ্বলন্ত উদাহরণ সামনে, এটার কী করবেন? তাদের কোনো জবাব ছিল না। কারণ তাদের ওই একটাই; টাকা পাবে আর বিশ্বব্যাংক বলেছে। বিশ্বব্যাংক যা বলেছে, মনে হয় ফেরেশতা এসে কথা বলেছে। যা বলেছে সেটা করতে হবে। এভাবে তারা আমাদের পাটকলগুলো একে একে ধ্বংস করে দেয়।’

সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সরকার অব্যাহতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগেও পাটের সেই অমিত সম্ভাবনা রয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ সরকার সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার অংশ হিসেবে দেশব্যাপী পাট দিবস এবং পাটপণ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

পাট ও পাট শিল্পকে অবহেলা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এক সময় পাট রফতানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হতো। এখনও পাট থেকে অনেক পণ্য তৈরি করা হয়। তাই পাট শিল্পকে আর অবহেলা করা যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের পাটকলগুলো একে একে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু আমরা ক্ষমতায় এসে দেশের সম্পদের বিকাশ ঘটাতে পাট নিয়ে কাজ শুরু করি। কারণ আমরা জানি প্রাকৃতিক নিয়মে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে পাটের ভূমিকা আছে। ক্ষমতায় এসে খুলনার খালিশপুরসহ অনেক পাটকল আমরা চালু করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ প্রায় ৩৫ রকম পণ্য পাট থেকে উৎপাদন হচ্ছে। পাটের শাড়ি না হলে এক সময় মেয়েদের বিয়ে হতো না। পাটের মক কিছু আমাদের কাজে লাগে। এখন আসবাবপত্রও পাট থেকে তৈরি হচ্ছে। তাই পাটকে অবহেলা করা যায় না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাটকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। তখন পাট রফতানী করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আসছিল। যদিও তা ব্যবহার হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে। এই বৈষম্যটা বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু পাটের প্রতি স্বাধীনতা বিরোধীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ আছে। যার ফলে বিএনপির সময় আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে ২৬ হাজার লোক বেকার হয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে পাটের গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেই। ইতোমধ্যে ড. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের জন্ম রহস্য বের করা সম্ভব হয়েছে। অতি গোপনীয়তার সঙ্গে আমরা এ গবেষণা করেছিলাম। জন্ম রহস্য আবিষ্কারের ফলে পাটের উৎপাদন ও এর ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পাটকল বন্ধ করতে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। ১৯৯৩ সাল থেকে গোল্ডেন হ্যান্ড শেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের বিদায় দেয়ার চুক্তিও করে। একই সময় বিশ্বব্যাংক ভারতকে পাটকল চালুর জন্য টাকা দেয়ার চুক্তি করে। বিএনপির সময় বিশ্বব্যাংকের কথা ফেরেশতার মতো ছিলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাট একটি সোনালী আঁশ। যার কপাল পুড়তে শুরু করে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটই ছিল এক সময় মূল্যবান সম্পদ।’

ড. ইউনূসকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের স্বনামধন্য একজন ব্যাংকের এমডি পদ নিয়ে কত বড় ষড়যন্ত্র করলেন। পদ্মা সেতুর কাজ পর্যন্ত বন্ধ করে দিলেন। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংক সে সময় বলছিলো এই করলে টাকা দেবে, ওই করলে টাকা দেবে। কিন্তু আমি বলেছিলাম, মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আমরা কোনও টাকা নেবো না। তখন আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলাম যে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনও দুর্নীতি হয়নি। কানাডার আদালতে তা প্রমাণ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় আমার ও আমার পরিবারের ওপর দিয়ে যে কত অত্যাচার গেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। দেশের মানুষের মান মর্যাদা আমার ও আমার পরিবারের জন্য ক্ষুণœ হবে না, অন্তত এটা আমি কথা দিতে পারি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ব্যাংকের এমডি পদের লোভে যে দেশের এতো বড় সর্বনাশ করতে পারে, তার বিচার দেশবাসী করবে। বয়স হয়েছে এমডি পদ ছেড়ে দেবেন, এটাই নিয়ম।’