ভারতে বিএনপি নেতার বৈঠক: বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলিদের জন্য খুলে দেয়া হবে!

নিউজ নাইন, ডেস্ক:  ইসরাইল ভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘জেরুজালেম অনলাইন ডট কম’ অতি সম্প্রতি এক সংবাদে প্রকাশ করেছে, ‘শিগগিরই সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলিদের জন্য খুলে দেয়া হবে। বাংলাদেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন সরকার ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে।’
সেখানে বলা হয়েছে, ইসরাইলের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি’র প্রধান মেন্দি এন সাফাদি সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করছেন তিনি। ওইসব বৈঠকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন মেন্দি এন সাফাদি। ওই বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকশেষে একটি গ্রুপ ছবি তোলেন সবাই। সেখানে ছবিতে বাম দিকে আসলাম চৌধুরীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আর সামনেই বসে আছেন মেন্দি এন সাফাদি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আসলাম চৌধুরী শনিবার ইত্তেফাকে পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলেছেন, তিনি দিল্লি সফরকালে ট্যুরিস্টবাসে চলার সময় শিপন বাবুর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানে তার সঙ্গে উপস্থিত লোকজন একটি ছবিও তোলেন। কোনো ধরনের বৈঠকে তিনি ছিলেন না। অথচ ইত্তেফাকের হাতে আসা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ‘তেলআবিব-ইন্ডিয়া রিলেশনশিপ’ শীর্ষক একটি ব্যানারের সামনে ১০ জনের একটি গ্রুপ ছবি তোলেন। সেখানে ছবির বাম দিকে দাঁড়িয়ে আছেন আসলাম চৌধুরী। তার পাশেই দাঁড়ানো শিপন কুমার। আর সামনের সারিতে বসে আছেন মেন্দি এন সাফাদিসহ কয়েকজন আরএসএস নেতা।
‘জেরুজালেম অনলাইন ডট কম’ এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সরকারকে ‘বাংলাদেশে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার’ বলে অবিহিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কাজ করছেন সাফাদি। এরপর নতুন একটি সরকার আসবে যারা ইসরাইলের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে। সংখ্যালঘুদের নির্যাতনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে এবং বঞ্চিত হাজার হাজার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বিলীন হওয়া ঠেকাতেও কাজ করছেন সাফাদি। তিনি সম্প্রতি ভারত সফর করছেন। সেখানে তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের দুর্দশা সম্পর্কে আলোচনা করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ২০১৪ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘ভারত সফরে সাফাদি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে তিনি বিভিন্ন কাজের সমন্বয় করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় কি করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা করছেন। তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন আনতে কাজ করে যাচ্ছেন। এই দেশটি কেবল সংখ্যালঘুদের জন্য হুমকি নয়, দেশটি সন্ত্রাসীদেরও স্বর্গ। সাফাদি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। নতুন সরকার ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে।’

ওই অনলাইনের প্রতিবেদককে সাফাদি বলেন, ‘শিগগিরই সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের দরজা ইসরাইলিদের জন্য খুলে দেয়া হবে। আর এটা অসম্ভব কোনো আকাঙ্ক্ষা নয়। নির্যাতিত এবং মানুষের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা একটি নৈতিক দায়িত্ব, সুতরাং আমি এখানে এসব মানুষকে সহায়তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এখানে ঘটা সবকিছু বাস্তব, ফিলিস্তিনের মতো ষড়যন্ত্রমূলক নয়। এখানে মানুষ নির্যাতিত এবং হত্যার শিকার হয়, কারণ তারা ভিন্ন মতের। এখানে আমি ইসরাইলি হতে পেরে গর্বিত এবং আরো গর্বিত যে এখানকার অনেক মানুষকে আমি ইসরাইলের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলতে পারছি। এমনকি এই দেশের নাগরিকদের পাসপোর্টেও লেখা থাকে ইসরাইল ছাড়া সব দেশ ভ্রমণ করতে পারবে। সেটাও আমি শিগগিরই পরিবর্তন করতে যাচ্ছি।’

একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, খুলনার শিপন কুমার প্রথমে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট হয়। তিনিই খুুঁজে বের করেন একজন সাংবাদিককে, যিনি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করতে আগ্রহী হন। ওই সাংবাদিকের বাড়িও চট্টগ্রাম। তিনি শিপন কুমারকে নিয়ে যান চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর কাছে। তিনিও সরকার উত্খাতে কাজ করতে রাজি হন। দেশে কয়েকদফা বৈঠকের পর সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করতে তারা ভারতে যান। কলকাতা ও দিল্লিতে দুই দফা অভ্যন্তরীণ বৈঠক ছাড়াও বিভিন্ন সেমিনারে তারা অংশ নেন। সেখানে বাংলাদেশের সরকার উত্খাতে চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশে ইসলামভিত্তিক দলের কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন। তারাও শিপন কুমার বসুর মাধ্যমে মেন্দি এন সাফাদির কার্যক্রমে হাত মেলান। সরকার পরিবর্তনে তারাও বিএনপির সঙ্গে সহযোগিতা করার নিশ্চয়তা দেন ইসলামভিত্তিক দলের নেতারা। এ সকল নেতারা জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। লন্ডন থেকে নিশ্চয়তা দেয়ার পর আসলাম চৌধুরীর পক্ষে মেন্দি এন সাফাদিকে আর্থিকভাবে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়ে দেন। এসব তথ্য এখন বের হয়ে আসছে।