হুমায়ূন আজাদের ছেলে অনন্যের ‘কিস ফটো’ ‍নিয়ে তোলপাড়

নিউজনাইন২৪ ডেস্ক
ঢাকা: রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ইভেন্ট নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। চলছে তর্ক-বিতর্ক। প্রায়শই যা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সীমা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার এ ইভেন্টটি খুলেছেন জার্মানি প্রবাসী দুই ব্লগার শাম্মি হক ও লেখক হুমায়ূন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ। ইতিমধ্যে এই ইভেন্টে যোগ দেয়ার জন্য গোয়িং অপশনে ক্লিক করে ঘোষণা দিয়েছেন দুহাজার একশরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী। বিষয়টি নিয়ে কৌতূহলী হয়ে ইন্টারেস্টেড অপশনে দেখা যাচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী।

লাদেশের গণমাধ্যমের সীমা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও খবর হয়েছে এ আয়োজন। জার্মানিতে বসে ফেসবুকে ঢাকায় প্রকাশ্য চুমুর ঘোষণা দিলেও অনন্য-শাম্মী দু”জনই অবস্থান করছেন সেখানেই। তারা এই ইভেন্টে উপস্থিত না হতে পারলেও “কিস ফটো” ফেসবুকে আপলোড করার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এদিকে আলোচিত এ ইভেন্ট নিয়ে আপাতত কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ। তবে গোপনে গোপনে বিষয়টির খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ ইভেন্ট নিয়ে ভালোবাসা দিবসে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, প্রতিটি দিবসকে কেন্দ্র করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষেও একই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তা থাকবে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে এজন্য সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তাহ খানেক আগে জার্মান প্রবাসী দুই ব্লগার শাম্মী হক ও অনন্য আজাদ ‘ভালবাসা দিবসে পুলিশি পাহারায় প্রকাশ্যে চুমু খাব’ নামে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট পেইজ খুলে। মুহূর্তেই ফেসবুকে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় এটি। একদল এর পক্ষে যুক্তিতর্ক দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আরেক দল এ ইভেন্টের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের যুক্তি, দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে এ ইভেন্ট কোনোভাবেই সামঞ্জস্য নয়। এমনকি মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না। আলোচিত এ ইভেন্টের ফেসবুক পেইজ ঘেঁটে দেখা গেছে, শাম্মী হক ও অনন্য আজাদ যেসব পোস্ট এ ইভেন্ট পেইজে আপলোড করেছেন তার প্রতিটিতেই নানারকম প্রতিক্রিয়ার মন্তব্য রয়েছে। এসবের মধ্যে বেশিরভাগই শাম্মী হক ও অনন্য আজাদকে আক্রমণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীই এর বিরুদ্ধে লিখেছেন।

আলোচিত এ ইভেন্টের প্রস্তাবক অনন্য আজাদ তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের শেষাংশে বলেছেন, যে জাতি ও সম্প্রদায় হত্যা ও ধর্ষণকে লালন-পালন করে তাদের অগ্রগতি হাজার হাজার বছর পেছনে। ভালোবাসায় বিশ্বাসী না হয়ে হত্যায় বিশ্বাসী। ভালোবাসায় বিশ্বাসী না হয়ে ধর্ষণে বিশ্বাসী। এমন বাংলাদেশ তো ছিল না।”

শাম্মী হক তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, “আমি একটা কথা প্রায়ই বলি, নারী পৃথিবীর প্রাচীনতম সৌন্দর্য। কিন্তু পশুরা সুন্দর ভালোবাসে না, তাদের পছন্দ রক্ত। এই ইভেন্টে পেইজে গেলে বোঝা যায় বাঙালি কতটা পশু। চুমুর মতো ভালোবাসার গভীরতম আবেগ এর চাইতেও এদের কাছে রক্তাক্ত নারী অসম্ভব প্রিয়। এরা চুম্বনে বিশ্বাসী না এরা ধর্ষণে বিশ্বাসী।”

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের দুদিন আগে এই ইভেন্ট নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, “প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না বলে লোকজন এ ইভেন্টের বিরুদ্ধে খুবই সোচ্চার। প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা সম্ভবত আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে কিছুটা হলেও যায়। তাই মানুষ এসময় তুলনামূলকভাবে কম সোচ্চার থাকে।”

প্রখ্যাত সাংবাদিক শফিক রেহমান এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “ফেসবুকে চুমু খাওয়ার বিষয়ে যে ঝড় উঠেছে আমি মনে করি চুমু খাওয়া কোনো বাহাদুরি নয়। যারা করেছে একটা ফালতু জিনিস করেছে। ঘোষণা দিয়ে পুলিশের সামনে চুমু খাওয়া, আমাকে টিকিট দিলেও আমি যাবো না।”