একসপ্তাহ ধরে জ্বলছে ‘অভিশপ্ত’ কানাডা, ছড়িয়ে পড়ছে পাশের দেশেও

নিউজ নাইন২৪, ডেস্ক: এক সপ্তাহ ধরে দাবানলে পুড়ছে কানাডার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অ্যালবার্টার জঙ্গল। রোববার লাগা ওই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে ফোর্ট ম্যাকমুরে শহরে। তেলসমৃদ্ধ শহর ফোর্ট ম্যাকমুরে দাবানল ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আগুনে ওই এলাকার ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। আজকের মধ্যে দাবানল আকারে দ্বিগুণ হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

শনিবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডার ফোর্ট ম্যাকমুরে এখন অভিশপ্ত নগরী। প্রায় ৮৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে জ্বলছে আগুন। পুড়েছে দেড় হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল এমনকি সড়কও। শহর সংলগ্ন মহাসড়কে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শুধু কিছু পোড়া ল্যাম্পপোস্ট। শহরের বাসিন্দা তরুণ ক্যামেরন স্প্রিং বলেন, ‘হাতে ছিল মাত্র আধ ঘণ্টা। এরমধ্যেই কয়েকটা জামাকাপড়, দৈনন্দিন টুকিটাকি, ফোন-ল্যাপটপ, পাসপোর্ট আর ব্রাজিলিয়ান যুযুৎসু বেল্টটা নিয়ে গাড়ির দিকে দৌড়ালাম। এক নাগাড়ে কয়েকশ’ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে পৌঁছলাম এডমন্টনে। শেষ বারের মতো নিজের শহরটাকে দেখতে গিয়ে চোখ পড়ল গাড়ির রেয়ার-ভিউ কাচে। দেখলাম শহরটা জ্বলছে। হয়তো আমার বাড়িটাও…। আর পেছন ফিরে তাকাইনি।’

Ch4O1suWsAAR-dp

কানাডার ফোর্ট ম্যাকমারে শহরে চারদিন আগে যে দাবানল শুরু হয়েছিল তা এখনো আয়ত্তে আনা সম্ভব হয় নি বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। এই দাবানল আগামী ২৪ ঘন্টায় দ্বিগুণ আকার ধারণ করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এই মুহূর্তে দাবানল জ্বলছে নিউইয়র্ক শহরের আয়তনের সমান এলাকা জুড়ে। দমকা বাতাসের বেগে এবং শুকনো ডালপালার কারণে তা আরো দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। শহরের ৮০ হাজারের বেশি মানুষ সবাই শহর ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় সরে গেছেন। দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী দেশেও।

বেশিরভাগ মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়েছেন। যদিও অনেকে উত্তরাঞ্চলে সরে গেছেন। স্থলপথে একটি গাড়িবহর স্থানীয় তেলকর্মীদের নিয়ে উত্তরে অস্থায়ী শিবিরে নিয়ে যাচ্ছিল। সেই যাত্রা স্থগিত করতে হয়েছে। কারণ সেখানে আগুনের শিখা রাস্তার ওপর দুইশত ফুট উঁচুতে জ্বলছে। দক্ষিণাঞ্চলগামী দেড় হাজারের মতো গাড়িও গত শুক্রবার মাঝপথে আটকে গেছে। কারণ আগুনের মধ্যে দিয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইতোমধ্যে আগুন এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে জ্বলছে। দেশটির দাবানল নির্বাপণ ব্যবস্থার প্রধান জানিয়েছেন, এই আগুন দ্বিগুণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে তাদের ধারণা। তবে তা শহরের উত্তরপূর্বে প্রত্যন্ত জঙ্গল এলাকার দিকে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান। আকাশ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে এবং বাতাসে আগুনের হল্কা সংশ্লিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রচুর উঁচু উঁচু গাছপালা পুড়ে গেছে।

তিনি বলেন, আগুনের শিখা যেভাবে চারপাশে শাখার মত শুঁড় ছড়াচ্ছে তাতে মানুষের এর মধ্যে আটকা পড়ে যাবার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ফোর্ট ম্যাকমারে শহরে কেউ আটকা পড়ে আছেন কি না তা কর্তৃপক্ষ খুঁজে দেখছে। হাজার হাজার মানুষকে বিমানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রদেশ জুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি হিসাবে বিপর্যয় মোকাবেলায় নামানো হয়েছে এক হাজারের বেশি দমকলকর্মী, দেড়শত হেলিকপ্টার, ২৯৫টির বেশি ভারী যন্ত্রপাতি এবং ২৭টি তেলবাহী বিমান। কানাডার আলবার্টা প্রদেশের ফোর্ট ম্যাকমারে শহরে ছড়িয়ে পড়া দাবানল ক্রমশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, এই দাবানল প্রতিবেশী প্রদেশ সাস্কাটচেওয়ানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিবিসি জানিয়েছে, গরম, শুকনো আর ঝড়ো হাওয়ার কারণে হাজার চেষ্টা করেও শত শত দমকল কর্মী দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। দাবানলের কারণে কানাডার তেলের শহর বলে পরিচিত ফোর্ট ম্যাকমারে থেকে ইতোমধ্যে ৮০ হাজার লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এই শহরের উত্তরে এখনও আটকা পড়ে আছে হাজার হাজার মানুষ। পর্যায়ক্রমে তাদের সরিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কানাডায় ভয়াবহ দাবানলে
কানাডার তেলসমৃদ্ধ ফোর্ট ম্যাকমারে নগরীতে ভয়াবহ দাবানলে

আলবার্টা প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রাচেল নোটলে বলেছেন, এখন আর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো উপায় নেই। একদিকে প্রচন্ড তাপমাত্রা আর অন্যদিকে ঘন্টায় প্রায় ২৫ মাইল বেগে বইছে বাতাস। এই অবস্থায় ঘন বনসমৃদ্ধ এলাকায় আগুন আরো দ্বিগুণ হয়ে উঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দাবানলে ইতোমধ্যে ২ লাখ হেক্টর এলাকা আক্রান্ত হয়েছে। এর কোনো কোনো অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আবার কোনো অংশে মাত্রই আগুন ধরেছে।

আলবার্টার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার কর্মকর্তারা হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, দাবানল এখনো ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। তবে বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারে। এই অঞ্চলে আজ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া দফতর। কানাডায় গত কয়েকদিনের দাবানলে ১৬০০ স্থাপনা ভস্মীভূত হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।