রিজার্ভ চুরি: ফিলিপিন্স ‘খেলাচ্ছে’ -অর্থ প্রতিমন্ত্রী

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত দিতে ফিলিপিন্সের ‘বিভিন্ন রকম বক্তব্যে’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ে সম্পাদকদের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি বলেছেন, “ওই যে টাকা, একবার বলে কালকে দিয়ে দিবে, আবার বলে সময় লাগবে। এটা নিয়ে আমার মনে প্রথম দিকে সন্দেহ ছিল। এখনো আমি মনে করি, দে আর প্লেয়িং।” অবশ্য মান্নানের ভাষায় এটা ‘ইচ্ছাকৃত নয়’, ফিলিপিন্সের ‘সিস্টেমই এরকম’। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ফিলিপিন্সের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থেকে ফিলিপিন্সি সরিয়ে নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের ‘উদ্ধারযোগ্য’ একটি ‘বড় অংশ’ ৩০ জুনের মধ্যে ফেরত দেয়ার আশার কথা শুনিয়েছে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটি। অর্থ ফেরতের প্রক্রিয়া শুরুর অংশ হিসেবে মামলাও হয়েছে দেশটির আদালতে।
ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটির তদন্ত অনেক এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে কী করছে এই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমার ধারণা, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কিছু অফিসার নিউইয়র্ক, কলম্বো, ম্যানিলায় ঘোরাফেরা করছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।”

ফিলিপিন্সের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিও’র নামেও বাংলাদেশের রিজার্ভের ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। তবে বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে ওই টাকা আর সেই অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, “উই ওয়ান্ট দেম টু অপারেট ফ্রিলি অ্যান্ড ফেয়ারলি। এটাও স্বীকার করতে হবে, কয়েক মাস আগ পর্যন্ত তাদের সৃজনশীলতা সম্পর্কে, তাদের অভিনবত্ব সম্পর্কে আপনারাও ভুরি ভুরি প্রশংসা করেছেন।”

অর্থ খোয়া যাওয়ার বিষয়টি প্রায় এক মাস গোপন রাখায় সমালোচনার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন আতিউর রহমান, যিনি বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য এর আগে প্রশংসিত হচ্ছিলেন।

গভর্নরের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সচিব পর্যায়েও সে সময় রদবদল আনে সরকার। মান্নান বলেন, “এখন একটা ঘটনা যখন ঘটে গেছে, নট দ্যাট উই আর অবলিভিয়াস। আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। ফিলিপিন্সের মতো অতোটা নয়। আমার নিজের কিছু মতামত আছে। আমি এখন তা বলবো না। ফিলিপিন্স ইজ ভেরি ওয়ান্ডারফুল রাষ্ট্র। তারা নিজেদের কাজ করছে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুরো বিষয়টি এখন কে দেখছে- এ প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রতিমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, “উই আর ইন ডিলেমা। ইট ইজ অ্যা ইনস্টিটিউশন বাই ইটসেলফ, এর একটা নিজস্ব ব্যক্তিত্ব আছে। থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি। “গণতন্ত্রের প্রয়োজনে অর্থনীতির শৃঙ্খলার প্রয়োজনে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তাই আছে। আমরা চাই আমাদের এই সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউশনটা সেইভাবে গড়ে উঠুক।” এসব কারণে সরকার বা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা ‘সচেতনভাবেই’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিজেদের একটু দূরে’ রাখেন বলে দাবি করেন প্রতিমন্ত্রী।

রিজার্ভ চুরির ঘটনা জানাজানির পর সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি এরইমধ্যে ‘অন্তর্র্বতীকালীন প্রতিবেদন’ দিলেও সরকারের তরফ থেকে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তদন্ত কমিটির পাওয়া তথ্য সংবাদমাধ্যমে জানানো হবে।