যিনি সৃষ্টির মূল ও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব

মসজিদে নববী শরীফ

মুফতী আহমদ আবু সাফওয়ানঃ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন একমাত্র উনার হাবীব আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে। বিষয়টি হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত আছে এভাবে-
كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف.
অর্থ: “আমি গুপ্ত ছিলাম। আমার মুহব্বত হলো যে, আমি জাহির হই। তখন আমি আমার (রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্যই সৃষ্টি করলাম মাখলূকাত (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে)।”

অপর এক হাদীছে কুদসীতে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তাহলে কোনোকিছুই সৃষ্টি করতাম না।
তিনি আরো ইরশাদ করেন, আমি যদি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম, তাহলে আমি আমার সম্মানিত রুবুবিয়াতই প্রকাশ করতাম না। সুবহানাল্লাহ! (দলীল : আল মাকাসিদুল হাসানা/ ৮৩৮, কাশফূল খিফা/২০১৩, আসনাল মুত্বালিব/১১১০, তমীযুত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬, সিররুল আসরার, কানযুল উম্মাল)

রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি ও মুহব্বতই মুসলমানদের নাজাতের মূল:

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

والله ورسوله احق ان يرضوه ان كانوا مؤمنين.

অর্থ: “যদি তারা মু’মিন হয়ে থাকে, তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করা, কেননা উনারাই সন্তুষ্টি প্রাপ্তির সর্বাধিক হক্বদার।” (সূরা তওবা: আয়াত ৬২)

অর্থাৎ মু’মিন হতে হলে শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতই যথেষ্ট নয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনাকেও মুহব্বত করতে হবে। অন্য কথায়, ঈমানদার হতে হলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক অন্যতম শর্ত।

কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

النبى اولى بالـمؤمنين من انفسهم

অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিনগণের নিকট সর্বাধিক প্রিয়।” (সূরা আহযাব: আয়াত ৬)

অর্থাৎ ঈমানদারদের পরিচয় হচ্ছে, তাঁরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সমস্ত কিছুর চেয়ে বেশি মুহব্বত করবেন। আর এ বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه و سلم قال لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين

অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে নিজের পিতা-মাতা, সন্তান এবং সমস্ত মানুষ হতে অধিক মুহব্বত না করা পর্যন্ত তোমাদের কেউই কস্মিনকালেও ঈমানদার হতে পারবে না।” (বুখারী শরীফ)

অর্থাৎ মু’মিন হতে হলে মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করতে হবে। আর মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করতে হলে আগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বাধিক মুহব্বত করতে হবে।

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসমূহ দ্বারা প্রতিভাত হলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন কুল-কায়িনাত বা কুল-মাখলূক্বাত সৃষ্টির মহান উপলক্ষ বা উসীলা। উনাকে সৃষ্টি না করা হলে কোনোকিছুই সৃষ্টি করা হতো না।
কাজেই, যিনি সৃষ্টিরাজির অস্তিত্ব উনার সম্পর্কে কায়িনাতবাসীকে জানতে হবে এবং বিশেষ করে মানুষ ও জিন সম্প্রদায়ের জন্য উনার প্রতি ঈমান আনা এবং উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ করা ফরযে আইন।

লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।