সন্ত্রাসবাদীদের আস্তানায় ১৭ গ্রেনেডসহ বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ

ঢাকা: রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় সন্ত্রাসবাদী আস্তানা ‘সূর্য ভিলা’ থেকে ১৭টি গ্রেনেড, ৩টি পিস্তল ও ২টি সুইসাইডাল ভেস্টসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে পুলিশ।
আজ রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট।
পরে সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

বোমার স্প্লিন্টারে নারী সন্ত্রাসবাদীর পেট ক্ষতবিক্ষত:
নিজের শরীরে বাঁধা বোমার স্প্লিন্টারেই মারা গেছে আশকোনায় আত্মঘাতী নারী ও সন্ত্রাসী সুমনের স্ত্রী। তার পেট ও নিম্নাংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে।
আজ দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ওই নারীর ক্ষতবিক্ষত পেটে স্প্লিন্টার ও বোমার অংশ পাওয়া গেছে। পেটের নিচের অংশ ছিল ক্রাশড্। পেটে বোমা রেখে বিস্ফোরণ ঘটানোর কারণে এমনটি হয়েছে। শরীরের অন্যত্র আঘাতের চিহ্ন নেই। সোহেল মাহমুদ আরো জানান, ‘ময়নাতদন্তের পর ওই নারীর দাঁত, চুল, থাই মাসলের নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া বোমার অংশ এবং স্প্লিন্টারও নমুনা হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত থাকবে।’
শনিবার দুপুরে পুলিশের অভিযানের এক পর্যায়ে দক্ষিণখানের আশকোনার পূর্বপাড়ার সন্ত্রাস আস্তানা থেকে ওই নারী শিশুসহ বেরিয়ে আসেন। নিজের শরীরে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আর শিশুটি আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শনিবার আশকোনার একটি সন্ত্রাস আস্তানায় পুলিশের অভিযানকালে আত্মঘাতী বোমায় এক নারীসহ দুই সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়। অপরজন সন্ত্রাসনেতা তানভীর কাদেরীর ছেলে। নিহত ওই নারী সন্ত্রাসনেতা সুমনের স্ত্রী বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অভিযানকালে পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সন্ত্রাসনেতা জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও তার মেয়ে এবং সন্ত্রাসনেতা মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তার মেয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু সন্ত্রাস সুমনের স্ত্রী, কাদেরীর ছেলে (১৪) ও সন্ত্রাস ইকবালের মেয়ে (৪) ভেতরে থেকে যায়।
এরপর বেলা ১টার দিকে সুমনের স্ত্রী এক শিশুসহ বেরিয়ে আসেন এবং নিজের কোমরে বাঁধা গ্রেনেডে বিস্ফোরণ ঘটান বলে পুলিশ জানায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তার সঙ্গে থাকা শিশুটি আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভেতরে আফিফের লাশ, গ্রেনেড-সুইসাইডাল ভেস্ট:
রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনায় সন্ত্রাসী আস্তানায় পুলিশের অভিযানের পর আজ ভবনটিতে ফের প্রবেশ করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থলে রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি। এর আগে সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য ওই ভবন ঘিরে রাখে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) স্পেশাল অ্যাকশন ডিভিশনের ডিসি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার জানিয়েছে, আজ সকাল থেকে বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ভবনের ভেতরে সার্চ শুরু করেছে। ভেতরে তিনটি কক্ষ আছে। একটি কক্ষ টিয়ার শেল গ্যাস দ্বারা পূর্ণ। এটিতে এখনো প্রবেশ করতে পারেনি তারা। ওই রুমে সন্ত্রাসনেতা তানভীর কাদরীর ছেলে আফিফ ওরফে শহীদ কাদরীর লাশ পড়ে আছে। বাকি দুটি কক্ষে তারা প্রবেশ করতে পেরেছে।

তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ওই গ্যাসপূর্ণ কক্ষের ভেতরে গিয়ে গ্যাস নিঃসরণ করবে। পরে কক্ষটিতে প্রবেশ করবে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট। মোট পাঁচটি গ্রেনেড পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারে। এছাড়া দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট আছে। বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের কাজ শেষে সিআইডি ভবনে প্রবেশ করে তদন্ত করবে।’ প্রলয় কুমার আরো বলেছে, ‘আফিফ কাদরী কীভাবে মারা গেছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপেন গোলাগুলি হয়েছে, টিয়ার গ্যাসও নিক্ষেপ করা হয়েছে। তার কাছেও পিস্তল ছিল।’ সিটিটিসির এডিসি ও বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের প্রধান ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘লাশের পাশে ও দরজার পাশে সুইসাইডাল ভেস্ট আছে। দরজার পাশের ভেস্টটি জেবুন্নাহার শিলার। তিনি আজ আত্মসমর্পণ করেছেন।’

ছানোয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘ড্রেসিং টেবিলের ওপরে ও খাটের ওপরে দুটি গ্রেনেড আছে। গ্রেনেডের পিনগুলো খোলা। যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ হতে পারে। রান্নাঘরের তাকের ওপর একটি গ্রেনেড আছে।’ তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদীরা মারা যাওয়ার আগে আমাদের জন্য কোনো ফাঁদ তৈরি করে গেছে কি না, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।’

পরে দুপুর আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের উত্তরা ইউনিটের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, তারা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কাজ করে ওই কক্ষ থেকে গ্যাস নিঃসরণ করেন। স্মোক রিজেকটরের মাধ্যমে জানালায় ভ্যাকুয়েশন তৈরি করে গ্যাস বের করা হয়। এখন বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভেতরে অবস্থান করছে।
তিনি আরো জানান, তাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আছে। এ ছাড়া, পাঁচটি ইউনিট আশপাশে স্ট্যান্ডবাই করে রাখা হয়েছে। গ্যাস নিঃসরণে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভেতরে বদ্ধ রুম ছিল। গ্যাসটা ভারী। তা ছাড়া, ঘরে আসবাবপত্র থাকার কারণে গ্যাস নিঃসরণে বিলম্ব হয়। ভেতরে কাঁদানে গ্যাস ও গ্রেনেডের ধোঁয়া ছিল।’