মীরাজে গমন করে জাহান্নামীর শাস্তি অবলোকন ও তার বর্ণনা

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মি’রাজ শরীফ-এ গমন করেন তখন তিনি জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। তিনি যখন জাহান্নাম পরিদর্শন করেন তখন কতিপয় লোকের পাপের শাস্তি অবলোকন করেন। যা হাদীছ শরীফসমূহে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। এখানে কিছু শাস্তির বর্ণনা তুলে ধরা হলো-

সুদখোরের শাস্তি:
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মি’রাজ শরীফ-এর রাতে এমন কতিপয় লোক দেখতে পেলাম, যাদের পেট এত বড় ছিল যে দেখতে মনে হয় যেন মানুষের বসবাসের ঘর। তার মধ্যে ছিল সাপ যা বাহির থেকে তাদের পেটে দেখা যেত। আমি হযরত জিরবীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো সুদখোর। নাউযুবিল্লাহ!

গীবতকারীর শাস্তি:
হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মি’রাজ শরীফ-এর রাতে আমি কতিপয় লোক দেখতে পেলাম, যারা তাদের নিজ মুখম-ল এবং বুক নিজের নখ দ্বারা আঁচড়াচ্ছে এবং নিজের শরীফ-এর গোশত নিজে খাচ্ছে। নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা সে সব লোক যারা মানুষের গোশত ভক্ষণ করে। অর্থাৎ মানুষের অগোচরে নিন্দা (গীবত) করে এবং মানুষদেরকে লজ্জিত করানোর ব্যাপারে তৎপর থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! (আবূ দাউদ শরীফ)

নামায-এ গাফলতিকারীদের শাস্তি:
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক দলকে দেখলেন, যাদের মাথা পাথর দ্বারা পিষিয়ে চূর্ণ-বিচুর্ণ করা হচ্ছে। পিষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় তা আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় পেষা হচ্ছে এবং এভাবেই চলতে থাকে। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা হচ্ছে তারা, যারা নিদ্রায় বিভোর থাকে ও নামাযের ব্যাপারে অলসতা করে। নাউযুবিল্লাহ!

যাকাত না দেয়ার শাস্তি :
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক দলকে দেখলেন, যাদের লজ্জাস্থানের অগ্রভাগ ও পশ্চাদভাগ কাপড়ের টুকরা দ্বারা জড়িত। আর তারা উট ও গবাদি পশুর ন্যায় দৌড়াচ্ছে এবং যাক্কুম (তিক্ত ফল বিশিষ্ট এক প্রকার কাটাযুক্ত বৃক্ষ) ও জাহান্নামের পাথর ভক্ষণ করছে। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা নিজ মালের যাকাত দেয়নি। নাউযুবিল্লাহ!

ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনীর শাস্তি :
মি’রাজ শরীফ-এর রাতে হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি দলকে দেখলেন, তাদের সামনে একটি পাতিলে পাকানো গোশত রয়েছে এবং অপর একটি পাতিলে কাঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত গোশত রয়েছে। সে লোকেরা পাকানো গোশত বর্জন করে কাঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত গোশত খাচ্ছে। হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের সে সব পুরুষ যারা পূণ্যবতী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কোন দুশ্চরিত্রা ও ব্যভিচারিনী মহিলার সাথে রাত যাপন করে ও সকাল পর্যন্ত তার নিকটই কাটায়। আর আপনার উম্মতের সে সব মহিলা, যারা পূণ্যবান স্বামী ত্যাগ করে কোন দুশ্চরিত্র ও ব্যভিচারী পুরুষের সাথে রাত যাপন করে। নাউযুবিল্লাহ!

আমলহীন ওয়ায়িযের শাস্তি :
বে-আমল ওয়ায়িযের শাস্তি প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “আমি মি’রাজ শরীফ-এর রাতে জাহান্নাম পরিদর্শনে গিয়ে দেখি যে, কতিপয় ব্যক্তিদের ঠোঁট আগুনের কেচি দ্বারা কাটা হচ্ছে।”
আমি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এসব লোক কারা? তিনি বলেন, “আপনার উম্মতের যেসব লোক মানুষদেরকে নেক কাজের উপদেশ দেয় অথচ নিজেরা তা আমল করে না তাদের শাস্তি হচ্ছে এটা।” নাউযুবিল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)