হাঁস-মুরগি পালনে কচুয়ার ২ শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

চাঁদপুর সংবাদদাতা: কচুয়ায় হাঁস-মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। উপজেলার আশরাফপুর গ্রামের সফিক মাস্টারের বাড়ির কয়েকজন দীর্ঘদিন থেকে হাঁস-মুরগির আড়তদার হিসেবে পরিচিত। আগে অভাবের তাড়নায় কোনো রকম দিন পার করতেন। এখন তাদের সুখের সংসার। মুরগির খামার বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্যের চাকা। শুধু তারাই নন, হাঁস-মুরগি ফেরি করে বিক্রি করে কপাল খুলেছে ওই গ্রামের কয়েক শতাধিক পরিবারের।

সরেজমিন গেলে জানা যায়, সকালে হকাররা সাইকেলে হাঁস-মুরগি ঝুড়ি বেঁধে ফেরি করে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন গ্রামে গ্রামে। দেশের বগুড়া, সিলেটের হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার খামারিরা ১ কেজি থেকে ১২ গ্রাম ওজনের হাজার হাজার হাঁস ও মুরগি বিক্রির উদ্দেশে প্রতিদিন সকালে কচুয়ায় নিয়ে আসেন। এলাকার চারটি আড়তদার এ হাঁস-মুরগিগুলো ক্রয় করে তাদের অস্থায়ী খামারে রাখেন। এলাকার প্রায় ২০০ হকার হাঁস-মুরগি ক্রয় করে কচুয়া, শাহরাস্তি ও পাশের কুমিল্লার বরুড়া এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করেন। আড়তদার প্রতিটি হাঁস-মুরগি হকারদের কাছে ৫ থেকে ৬ টাকা লাভে বিক্রি করেন। এতে প্রতিজন হকার দৈনিক ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা মুনাফা পেয়ে থাকেন। এই হাঁস-মুরগি বিক্রির আয় দিয়েই মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।

হকার সুমন, বিল্লাল, সাখাওয়াত ও দুলাল জানান, প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এসে করোনার কারণে আর বিদেশ যেতে না পেরে চরম আর্থিক সংকটে পড়ি। এতে সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহ করা খুবই দুরূহ হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় লোক মারফত জানতে পারি আনোয়ার মিয়াসহ গ্রামের কয়েকজন আড়তদার সামান্য মুনাফা নিয়ে হাঁস-মুরগি বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ দিচ্ছে। আড়তদারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দৈনন্দিন হাঁস-মুরগি বিক্রি করার কাজে নিয়োজিত
হই।

এ কাজে নিজের কোনো পুঁজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে না। সকালে হাঁস-মুরগি নিয়ে বের হয়ে যাই। বিক্রি শেষে বিকালে এসে আড়তদারের পাওনা বুঝিয়ে দেই। হাঁস-মুরগি বিক্রি করে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ করি। করোনার সময় এ লাভের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও হাঁস-মুরগি বিক্রি করেই চলছে আমাদের সংসার। আড়তদার আনোয়ার হোসেন ও আবু জাফর জানান, প্রতিদিন প্রতিটি আড়ত থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ হাঁস-মুরগি হকাররা নিয়ে যায়। দু’চারটি অবিক্রীত থাকলে তা আমরা ফেরত নেই। হাঁস-মুরগি সংরক্ষণ এলাকায় যাতে পরিবেশ দূষণ না ঘটে সে জন্য হাঁস-মুরগির বিষ্টা পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়। হাঁস-মুরগির ব্যবসা করে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পেরে আত্মতৃপ্তি বোধ করছি। আশ্রাফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ এলাহী সুভাশ জানান, আড়তদারদের মাধ্যমে হাঁস-মুরগির এ ব্যবসায় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার অনেক বেকার যুবক বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা অপরাধমূলক কাজ পরিহার করে কর্মমুখী স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।