সরকার বুঝতে পেরেছে তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে: প্রিন্স

নিউজ ডেস্ক: মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই মাঝ পথে তাড়াহুড়া করে উদ্বোধন নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহের দানা বেঁধেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, বন্দুকের মুখে জিম্মি করে ১৪ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় থাকা বিনা ভোটের সরকার বুঝতে পেরেছে তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। মামলা, হামলা গ্রেফতার করে কণ্ঠ রোধের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার দিন ফুরিয়ে এসেছে।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রিন্স বলেন, মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেখ হাসিনা সেই পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ভরসা অথবা পাচ্ছে না। এ কারণে উন্নয়ন দেখাতে কাজ অসমাপ্ত রেখেই ডাকঢোল পিটিয়ে জনগণের কোটি কোটি টাকা অপচয় করে তাড়াহুড়া করে মেট্রো রেলের একাংশ উদ্বোধন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত রাজধানীবাসীকে অবরুদ্ধ রেখে মেট্রোরেলের আংশিক উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ আকাশচুম্বি ব্যয়ের এই মেগা প্রকল্প নিয়ে নিশিরাতের সরকার সীমাহীন অহমিকা আর কথিত কৃতিত্বের আনন্দে ভাসছে। তারা কোটি কোটি টাকার প্রচার মহাযজ্ঞে ঢেকে দিতে চাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে ৩-৪ গুন বেশী খরচ করা মেট্রোরেল প্রজেক্ট নিয়ে ওঠা দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগযজ্ঞ। ২০০৫ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলেই বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঢাকায় স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) তৈরি করে মেট্রোরেলের নির্মানের কার্যক্রম শুরু হলেও তা মুছে ফেলার অক্লান্ত চেষ্টা করছে প্রতিহিংসা পরায়ণ সরকার। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ওয়েবসাইটে এই মেট্রোরেলের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে সবকিছু বিস্তারিত রয়েছে। মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইন নির্মানের ক্ষেত্রে দুই দফায় ব্যয় বৃদ্ধি করে ২২ হাজার কোটি থেকে ৩৪ হাজার কোটি টাকা করা ছাড়া বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের বড় কোন অবদান জনগনের সামনে প্রতিভাত নয়।

প্রিন্স বলেন, ২০০৫ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে মেট্রোরেলের প্রাথমিক যে কাজ শুরু হয়েছিল এটা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। যে সরকারই ক্ষমতায় থাকতো এটা নির্মাণ হতো সময় ও চাহিদার প্রেক্ষিতে এটা নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বহু দেশে মেট্রোরেল আছে। বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশে এবং প্রতিবেশী ভারতের বড় শহরগুলোয় মেট্রোরেল ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধান সহযোগীর ভূমিকা নিয়েছে জাপান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেট্রোরেলের নির্মানের প্রস্তাব নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করে ২০০৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকার। ঐসময় সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঢাকায় স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) তৈরি করে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্টাডি রিপোর্টে প্রথমবারের মতো এমআরটি করার প্রস্তাব করা হয়। এরপর জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা এই কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং ২০০৮ সালে তারা এই প্রকল্পে যুক্ত হয়। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় “ঢাকার জন্য কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা” প্রণয়ন করে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় বোর্ড। এসটিপিতে একটি “২০-বছরের নগর পরিবহন নীতি (২০০৪-২০২৪)” অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা হয়েছে সমস্যা, যেমন গণ-ট্রানজিট সিস্টেমের উন্নতি (বাস এবং রেল পরিবহন), শহুরে এক্সপ্রেসওয়ের উন্নয়ন এবং একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা। যেহেতু ঝঞচ হল সরকারী পরিবহণ কাঠামো যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত, বর্তমান শহুরে পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নতির জন্য যা কিছু হচ্ছে তার মূল ধারণাপত্র।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক বলেন, ২০০৫ সালে এসটিপি প্রণয়ন এবং অনুমোদিত হয়েছিল এবং শহরের পরিবহন নেটওয়ার্কের জন্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনায় ৩ টি এমআরটি/বিআরটি লাইন নির্মানের কাজ ২০১০ সালের আগেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে, এমআরটি লাইন-৬ এবং বিআরটি লাইন ব্যতীত, অন্যান্য প্রকল্পগুলি পরে যুক্ত হয়েছে। ওই সময়ে এমআরটি লাইন ৬-কে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১০-১১ অর্থবছরে সমীক্ষা জরিপ চালানো হয়। মূলত ২০০৫ সাল থেকেই মেট্রোরেল নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় এবং জাপানের গভীর আন্তরিকতায় দীর্ঘ ১৮ বছর পর যা সফলতার মুখ দেখেছে।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গুম, খুন, হামলা, মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন, কন্ঠরুদ্ধ করে ক্ষমতায় থাকার দিন ফুরিয়ে গেছে। মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ মতিঝিল পর্যন্ত নির্মান কাজ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেখ হাসিনা সেই পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ভরসা পাচ্ছেন না। এই কারণে উন্নয়ন দেখাতে কাজ অসমাপ্ত রেখেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তাড়াহুড়া করে মেট্রোরেলের একাংশ জনসাধারণের চলাচলের জন্য উদ্বোধন করেছেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন,‘দেশের সবই তো আমরা করছি, শেখ হাসিনার সরকার করেছে। সবই শেখ হাসিনা করছেন।’ তিনি বলেছেন , দুর্নীতি পায়নি, অন্য কিছু পায় না, এখন বলে- ভাড়া বেশি।’ কিন্তু দেশের জনগণ জানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশেনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরেই উন্নয়নের সোপানে উঠেছে বাংলাদেশ। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আখ্যা পাওয়া “তলাবিহীন ঝুড়ির” অপবাদ গুছিয়ে স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করে উন্নয়ন উৎপাদনের রাজনীতির মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করেছিলেন। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগমখালেদা জিয়া স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তুপের ওপর সংসদীয় গণতন্ত্রের পতাকা উড্ডীন করেছিলেন এবং দেশকে ইমার্জিং টাইগারে পরিণত করেছিলেন। সেই দেশকে ১৪ বছরে ফোকলা করে এখন দুর্ভিক্ষের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এই নিশিরাতের সর্বভূক লুটেরা সরকার। আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়ন মানে দুর্নীতির মহোৎসব। মেগা প্রকল্প মানে দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে দুই হাতে লুটপাট করে অর্থনীতিকে পথে বসিয়ে দেয়া। সরকার জনগণের জন্য উন্নয়ন করছে না। তথাকথিত উন্নয়নের নামে নিজেদের পকেট ভরছে আর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। সেখানে সাধারণ জনগণের কোনো উন্নয়ন নেই।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মার সেতুর ব্যয় তিনগুণ বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করার মতো মেট্রোরেলের ২১ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-৬ এর খরচ অন্য দেশের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ বেশী করা হয়েছে নানা অজুহাতে। এর আগে ২০১৩ সালে ৬৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে দেশে ২০টি ডেমো ট্রেন এনে ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করেছিল এই সরকার। যা কিছুদিনের মধ্যে ভাঙারিতে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণকারী ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কস্ট অব কনস্ট্রাকটিং মেট্রোরেল ইন ইন্ডিয়া ভার্সেস ঢাকা মেট্রো!’ র্শীষক এক বিশ্লেষণে ভারতের ৮টি শহরের সঙ্গে ঢাকার মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয়ের তুলনা করা হয়। এতে দেখা গেছে, ভারতের বিভিন্ন শহরে মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় ৪ থেকে ৬ কোটি ডলার। অথচ ২০১৭-২৩ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে কমলাপুর ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ হচ্ছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে মেট্রোরেল (দ্বিতীয় পর্যায়) নির্মাণ প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১৪ সালে। ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের ১৩ দশমকি ৭৯ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ৬১টি স্টেশনের মধ্যে ১২টি মাটির নিচে। এরপরও মেট্রোরেলটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪৭০ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। মেট্রোরেলটির একটি অংশ ২০১৮ সালে শেষ হয়েছে ও বাকি অংশ ২০২৩ সালে শেষ হবে।

জয়পুরে মেট্রোর প্রথম পর্বের কাজ শুরু করা হয় ২০১০ সালে। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের দুই দশমিক ৭৮ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ১১টি স্টেশনের ৩টি মাটির নিচে। মাত্র ৫০ কোটি ডলারে নির্মাণ শেষে ২০১৪ তে উদ্বোধন করা হয় মেট্রোরেলটি। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এর দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালে। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের প্রায় ৬ কিলোমিটার মাটির নিচে। আর ২০টি স্টেশনের ৫টি ভূ-গর্ভস্থ। ১০২ কোটি ডলার ব্যয়ে এটির নির্মাণকাজ শেষে চলতি বছর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি ২৫ লাখ ডলার।

চেন্নাই মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু করা হয় ২০০৯ সালে। ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোর ২৪ কিলোমিটারই আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৩৪টি স্টেশনের ২০টি মাটির নিচে। ২০১৫ সালে আংশিক উদ্বোধনকৃত এ মেট্্েরার পুরোটা ২০১৬ সালে চালু করা হয়। এর বড় অংশ আন্ডারগ্রাউন্ড হলেও এটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২৪৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।

হায়দ্রারাবাদ মেট্রোর নির্মাণ শুরু করা হয় ২০১২ সালে। ৭২ কিলোমিটার এ মেট্রোর নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালে উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৭৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়ছে ৩ দশমিক ৮১ কোটি ডলার। আর নাভি মুম্বাই মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু করা হয় ২০১১ সালে। ২০১৮ সালে এটি উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রো নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। এটি ভারতের সবচেয়ে কম ব্যয়ের মেট্রো।

এদিকে ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ লক্ষ্মৌ মেট্রো নির্মাণ শুরু করা হয়েছে ২০১৪ সালে। এর প্রায় ১০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। আর ৩৪ স্টেশনের ১০টি মাটির নিচে। ২০১৭ সালে উদ্বোধনকৃত মেট্রোটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৫ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।
আহমেদাবাদ মেট্রোর নির্মাণ শুরু হয়েছে ২০১৫ সালে। ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোর ৬ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৮২ কোটি ডলার। ফলে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হবে ৫ কোটি ছয় লাখ ডলার। এছাড়া নাগপুর মেট্রোর নির্মাণও শুরু হয়েছে একই বছর। আগামী বছর এর একটি অংশ উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোটির নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৪০ কোটি ডলার। এতে কিলোমিটার প্রতি ব্যয় পড়বে ৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। কেবল ভারত নয়, ‘২০১৩-১৯ সালের মধ্যে নির্মিত ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার নর্থ-সাউথ মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১১-২০২১ সালের মধ্যে নির্মিত ভিয়েতনামের হ্যানয় শহরে লাইন-২-এ প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। ২০১৫-২০ সালে নির্মিত পাকিস্তানের লাহোর অরেঞ্জ মেট্রোরেলের নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

আপনারা জানেন এই মেট্রোরেলের অস্বাভাবিকভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে যা পাশর্^বর্তী দেশের মেট্রোরেলের ভাড়া থেকে দুই থেকে পাঁচগুণ বেশী। ঢাকার বাস ভাড়া থেকেও দুই/তিন গুণ বেশী। যা দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকারের কারণে চরম অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত জনসাধারণের আয়ত্ত্বের বাইরে। মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা লংঘন করে মেট্রোরেলের ভাড়া সর্বনি¤œ ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। ঢাকা মেট্রারেলের সর্বনি¤œ ভাড়া দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের ভাড়ার দ্বিগুণ এবং কলকাতার চেয়ে তিনগুণ বেশী। ঢাকার ২০ কিলোমিটারের ভাড়া কলকাতার চারগুণ, নয়া দিল্লী, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের তিনগুণ এবং লাহোরের পাঁচগুণ বেশী।

সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, কেবল মেট্রোরেল নয়, দুর্নীতির কারণে সড়ক ও রেলপথের বাংলাদেশের খরচ উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চীন-ভারতের চেয়ে যে বহুগুণ বেশি তা বহুল আলোচিত বিষয়৷ এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ইউরোপে ব্যয় হয় ৩০ কোটি টাকার মতো, চীন-ভারতে ১০-১৩ কোটি টাকা৷ সেখানে বাংলাদেশে ব্যয় হয় ৭০-১২০ কোটি টাকা৷ রেলপথ নির্মাণের ক্ষেত্রেও হিসেবটা এরচেয়েও বেশি৷ মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয়ের পরিমান অস্বাভাবিক হওয়ার নেপথ্যে যে দুর্নীতি, লুটপাট, কমিশন বাণিজ্য তা সর্বজন জানেন। পৃথিবীতে মোটামুটিভাবে স্বীকৃত পরিসংখ্যান যে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ে সবচেয়ে নিম্নমানের সড়ক-সেতু-ফ্লাইওভার-রেলপথ নির্মিত হয়৷ এ-ও স্বীকৃত যে, এর প্রধানতম কারণ দুর্নীতি৷ আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় জমি অধিগ্রহণের ফলে খরচ বাড়ে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য কোনো বক্তব্য নয়৷ যে দেশে আওয়ামীলীগ সরকারের লোকজন কাঁথা বালিশ সুই সুতা কিনতেও যেখানে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করে সেখানে মেগা প্রকল্প মানে মহালুটের উৎসব। মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন-৬ এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। গত ১৯ জুলাই হঠাৎ করে মেট্রোরেলের নির্মাণ ব্যয় একবারে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। জনগন জানতে চায় এই প্রকল্প থেকে কতটাকা লুটপাট হয়েছে। সরকার হিসাব না দিলেও একদিন এর হিসাব এবং লুটপাটের বিচার হবে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ করে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতি লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতি ফোকলা করে, জনগণের আয়-ইনকাম সংকুচিত করে তাদেরকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ঠেলে দিয়ে জ¦ালানি তেল, গ্যাস ও সারের দাম বৃদ্ধি করে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে জনজীবন দুর্বিসহ করে এবং এসবের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন দমন করতে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় হয়রাণী করে ছেলে ভোলানো গান গেয়ে হাতে মোয়া ধরিয়ে সরকার যদি ভাবে-এসব করে ক্ষমতার মসনদ রক্ষা করা যাবে, তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। দেশের প্রকৃত চিত্র আড়াল করতে আংশিক মেট্রোরেলের উদ্বোধনের নামে মিথ্যা অহমিকা ও ধাম্বিকতা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সারাদেশের জনগণ হাতের মুঠোয় প্রান নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বাংলাদেশের প্রাণভোমরা, দেশনায়ক তারেক রহমানের হিরন্ময় ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বে রাজপথে নেমেছে। তারা তাদের ১৪ বছরের হারানো হিস্যা কড়ায় গন্ডায় আদায় না করে ঘরে ফিরবে না। আপনাদের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সুতরাং কালক্ষেপণ না করে ক্ষমতা ছেড়ে পদত্যাগ করুন। ১০ দফা মেনে নিন।
গতকাল চলমান আন্দোলনের ১০ দফা দাবিতে ঢাকায় স্মরণকালের সর্ববৃহৎ গণ-মিছিল সফল করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান আপনাদের মাধ্যমে ঢাকার বীর জনগণ এবং বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অপরাপর রাজনৈতিক দলকেও তাদের গণ-মিছিলের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গতকাল বিএনপির গণ-মিছিল সফল করতে নয়াপল্টনে আসার সময় এবং গণ-মিছিল থেকে নিজ নিজ এলাকায় ফেরার সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৬জন নেতাকর্মীকে পলিশ গ্রেফতার করেছে। এর আগে এই গণ-মিছিলকে কেন্দ্র করে গত ৭দিনে ঢাকা মহানগর উত্তরের ২১ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে পোস্টার লাগানোর সময়ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

গণ-মিছিল থেকে ফেরার পথে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ২১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছে ৫১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন রতন, মোঃ সেলিম, ৫৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শামীম, ৩৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নুর ইসলাম, ৪১ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ মুসা, ৬৪ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ ইমরান, উত্তরা পশ্চিম থানা শ্রমিকদল নেতা মোঃ আল আমিন, ওয়ারী থানাধীন ৩৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদ পাটোয়ারী, চকবাজার থানাধীন ২৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মেজবাহ উদ্দিন হীরাকে না পেয়ে তার ছেলে এইচ.এস.সি পরীক্ষার্থী সিফাতকে গ্রেফতার করেছে চকবাজার থানা পুলিশ।

কারাবন্দী নেতাদের চিকিৎসার দাবি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক বলেন, চলমান আন্দোলনকে দমন করতে ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ। কারাগারে তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। রুহুল কবির রিজভী বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ। আমরা তাকে কারাগারের বাইরে অন্য কোন উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে চিকিৎসা খরচ পরিবার বহন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) এড. আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য (দফতরে সংযুক্ত) মোঃ আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাকেব সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।