রিজার্ভের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রীসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায় এমন শঙ্কা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ থেকে গত মাসে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অর্থ সরানো হয় ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার মাঝপথে আটকানো গেলেও ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের মাকাটি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নেয়া ৮ কোটি ডলার ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে পাচার হয়ে যায়। এ ঘটনায় ফিলিপাইনের দুর্নীতিবিষয়ক সিনেট কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। অর্থ পাচারের ঘটনায় ইতোমধ্যে সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছেন ব্যাংকের মাকাটি সিটির জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপকসহ ছয় ব্যক্তি।

এই অর্থ যাদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বের হয়ে যায় তাদের গ্রেফতার করলেও তেমন একটা লাভ হবে না। কারণ এই অর্থ আর তাদের হাতে নেই। ক্যাসিনো হয়ে চলে গেছে অন্যের হাতে। আর অন্যরা এই টাকা বৈধ করেই নিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার উদ্ধারের সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিপাইন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট গঠিত ব্লু-রিবন তদন্ত কমিটির সদস্য সিনেটর সার্জিও ওসমেনা। দেশটির দৈনিক ইনকোয়ারার পত্রিকাকে গত বুধবার এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

সার্জিও ওসমেনা বলেন, ‘অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা কম। আমরা এখনো ক্যাসিনোগুলোর কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা স্যালরির (ক্যাসিনো) প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করিনি। কারণ তিনি তখন দেশের বাইরে ছিলেন; তবে যে করপোরেট কাউন্সিলকে পাঠিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানে না।’

ওসমেনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি যাওয়া অর্থের খোঁজ পাওয়ার ব্যাপারটি নির্ভর করছে ক্যাসিনোর সহযোগিতার উপর। আশা করি তারা (ক্যাসিনো) তা (ইলেক্ট্রনিক ট্রেইল) দিতে পারবে। আমরা জানি না এ বিষয়ে তারা আসলে কীভাবে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করবে। তবে আইনে অনেক ফাঁক-ফোকর রয়েছে। এসব দিয়ে তারা বেরিয়েও যেতে পারে।’ এদিকে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান ফিলিপাইনের সিনেটর তিউফেস্তো গুইংগুনা বলেছে, ‘ওই অর্থ কৃষ্ণগহবরে (ব্ল্যকহোল) চলে গেছে। তাই তা উদ্ধার করা কঠিন হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন। আর সরকার থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দীন বলেন, ‘টাকা উদ্ধারের বিষয়টি তদন্তের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত শেষ হলে তারপর বলা যাবে। আগামী ৩০ দিন এ ব্যাপারে কোনো কথা নয়।’ গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর ফজলে কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনাই প্রথম কাজ। পাশাপাশি এর পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’

ফজলে কবির বলেন, ‘এই ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যে আশা হারাতে বসেছিল, তা যেন আর না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আরো বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সংস্কার করে নতুন উদ্যমে কাজ করব।’

বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে বসে পরবর্তী কর্ম নির্ধারণ করব। আমরা কোনো কমিটি গঠন করবো না। সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সেই তদন্ত কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করব। বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি চিহ্নিত করে সেটা উত্তরণ করতে সক্ষম হব।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান কর্মসূচিগুলো চলবে। আরো উন্নয়ন করার জন্য যা যা করা দরকার করব।’

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ‘হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে’ লোপাটের ঘটনায় আত্মসম্মান নিয়ে গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ওই দিনই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের নাম ঘোষণা করেন।