রজব মাসের বিশেষ দিবসগুলো মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ

আল্লামা মুফতি মুহম্মদ শফিকুল ইসলাম:

মুসলমানরা একবিংশ শতাব্দিতে এসে ধর্মীয় সংস্কৃতি, বিশেষ দিবসসমূহ হারিয়ে ফেলেছে। এটা মুসলমানদের ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটা অন্যতম কারণ। কেননা, ‘দিবস পালন’ এমন একটি বিষয় যা মানব জাতির চিন্তাে-চেতনাকে প্রভাবিত করে। অমুসলিম বিশ্বে দেখা যায় ৩৬৫টি দিনের মধ্যে ৩৬৫টিরও অধিক বিশেষ দিবস। তারা  এই সংস্কৃতি কোত্থেকে পেলো? মুসলমানদের থেকেই তারা সভ্যতা, সংস্কৃতি  চর্চা করতে শিখেছে। পক্ষান্তরে মুসলমানরা তাদের স্বকীয়তা ছেড়ে অমুসলিমদের সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তবে মুসলমানদের এই বিপথগামীতার জন্য দায়ি এক শ্রেণীর পথভ্রষ্ট ধর্মব্যবসায়ী, যারা সমাজে আলেম সেজে মুসলমানদের মিসগাইড করার এজেন্ডা নিয়ে অমুসলিমদের এজেন্ট হয়ে কাজ করে।

বলাবাহুল্য, প্রতিটি হিজরী মাসেই রয়ে গেছে মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ বিশেষ অনেক দিবস, যা পালন করার মধ্যেই সতেজ থাকে মুসলমানদের ঈমান, আমল, সংস্কৃতি তথা মুসলমানিত্ব।

শুরু হলো শাহরুল আযম পবিত্র রজবুল হারাম মাস। এ মাসেও অনেকগুলো ইসলামী দিবস রয়েছে। এসব দিবস সম্পর্কে জানা, আলোচনা করা, দিবসগুলো পালন করা মুসলমানদের জন্য ফরয। পবিত্র রজম মাসের বিশেষ দিবসসমূহ পর্যায়ক্রমে এখানে তুলে ধরছি-

পবিত্র ১লা রজব : আবু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনাদের সুমহান বরকতময় আযীমুশ শান নিকাহিল আযীম (শাদী মুবারক) দিবস।

পবিত্র ২রা রজব:  আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার (জন্ম) সুমহান দিবস এবং ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল আউওয়াল আলাইহিস সালাম (রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ১ম পুত্র) উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার (অর্থাৎ ইন্তেকাল) সুমহান দিবস।

পবিত্র ৬ রজব: পবিত্র ৬ রজব দু’টি বিশেষ দিবস। এক. লাইলাতুর রগ্বায়িব, দুই. খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিছাল শরীফ অর্থাৎ দীদারে ইলাহীতে যাওয়ার দিবস।

এবছরের ইয়াওমুল খামীস বা বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল ২০১৬ ঈসায়ী) দিবাগত রাত অর্থাৎ পবিত্র রজবুল হারাম মাস উনার প্রথম জুমুয়াহ শরীফ রাত্রটি হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ।

পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার ফযীলত- পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর ও পবিত্র লাইলাতুল বরাত অপেক্ষাও বেশি। পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব বলা হয় ওই রাত্রিকে, যে-ই রাত্রি মুবারক-এ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক নেন। সুবহানাল্লাহ! এ রাতটি নিশ্চিতরূপে দোয়া কবুলের খাছ রাত। তাই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত- এ রাতটিতে ইবাদত-বন্দেগী করে বিশেষভাবে দোয়া করা।

এ মহাসম্মানিত মাসের ৬ তারিখ (যা এবছরের জন্য ১৫ হাদি ’আশার-১৩৮৩ শামসী, ১৪ এপ্রিল-২০১৬ ঈসায়ী, বৃহস্পতিবার) সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র ১৩ রজব:  (২১ এপ্রিল-২০১৬ ঈসায়ী, বৃহস্পতিবার) আমীরুল মু’মিনীন, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র ১৪ রজব: (২২ এপ্রিল-২০১৬ ঈসায়ী, জুমুয়াবার) ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

আর এ মহাসম্মানিত মাস উনার ১৪ তারিখ (যা এবছরের জন্য ২৩ হাদি ’আশার-১৩৮৩ শামসী, ২২ এপ্রিল-২০১৬ ঈসায়ী, জুমুয়াবার) সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র ২৬ রজব: বিশেষভাবে আরো উল্লেখ্য যে, এ বছরের জন্য পবিত্র মি’রাজ শরীফ সংঘটনের মহান রাতটি হলো- ২৬ রজবুল হারাম (১৪৩৭ হিজরী) যা ৪ মে ২০১৬ ঈসায়ী ইয়াওমুল আরবিয়া বা বুধবার দিবাগত রাত। এ রাতে আখেরী নবী রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা উনার ইচ্ছায়  মি’রাজ শরীফ গমন করেন।

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে দ্বীন ইসলামের চর্চা পরিপূর্ণভাবে করার তওফিক দান করুন এবং আমাদের মুসলমানিত্ব ধরে রাখার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক।