যুক্তরাষ্ট্রে ২৪০০ কোটি টাকা লেনদেনের উৎস কী, প্রশ্ন বিএনপির

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: কোনো সুনিদিষ্ট অভিযোগে নয়, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসের ওপর ভিত্তি করে বিশিষ্ট সাংবাদিক সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আদালতে জমা দেওয়া মার্কিন সরকারের রিপোর্টে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ কিংবা দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ নেই। তা সত্ত্বেও শুধু তার ফেসবুকে দেওয়া একটা পোস্টের ভিত্তিতে ঢাকায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে এফআইআর হলো, গোপনে তদন্ত হলো, মামলা হলো ও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হলো।’

তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচার হওয়া মামলার অভিযোগপত্র, আদালতে জমা দেওয়া সরকারের লিখিত প্রতিবেদন, অভিযুক্ত কিংবা সাক্ষীদের কোনো জবানবন্দিতে সাংবাদিক শফিক রেহমান, কারাবন্দি সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কিংবা বিএনপির কোনো নেতার নাম উল্লেখ নেই। এমনকি ঢাকার রমনা থানায় দায়ের করা এফআইআর কিংবা পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায়ও তাদের নাম নেই।

‘অথচ শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে, মাহমুদুর রহমানকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো এবং একই কাল্পনিক অভিযোগে দেশে-বিদেশে অবস্থান করা বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতাদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছা অভিযোগ করে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে,’ অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব জানান, আমেরিকার নাগরিক রিজভী আহমেদ সিজারের বিরুদ্ধে আমেরিকার আদালতে একটি মামলা হয়েছিল। তাতে ২০১১ সালে তিনি সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে একজন এফবিআই এজেন্টকে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে এক হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন এবং কিছু নথি পেয়েছিলেন। তার অপরাধ ছিল, সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়া।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই মামলা চলাকালে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল, তাতে ৯ মার্চ ২০১৩ তারিখে জয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতে সিজারের দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়। একটি হলো সজীব ওয়াজেদ জয়ের জীবনযাপন ও দুর্নীতি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া এবং অন্যটি তাকে অপহরণ ও দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা।

তিনি বলেন, ‘বিচার চলাকালে সজীব ওয়াজেদ জয়ও নিজেকে ভিকটিম দাবি করে মামলার আসামি সিজার তাকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিল বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু জয়কে অপহরণ ও দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ, যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত না পেয়ে বিচারক মামলায় অভিযুক্ত সিজারকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন এবং জয়কে ভিকটিম মানতে রাজি হননি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আদালতে পেশ করা মার্কিন সরকারের ডকুমেন্টে জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ( প্রায় ২৪০০ কোটি টাকার) ‘সন্দেহজনক লেনদেনে’র বিষয়ে সরকার কেন কিছু বলছে না। শেয়ার মার্কেট ও ব্যাংকগুলোর যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে, তারও কোরো বিচার হচ্ছে না। এই দুই বিষয়ের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা জানার অধিকার অবশ্যই জনগণের আছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণ জানতে চায় যে, সন্দেহজনক এই লেনদেনের ৩০০ মিলিয়ন ডলারের উৎস কী, এই বিপুল অর্থের প্রকৃত মালিক কে? আমরা আশা করি, সরকার জনগণকে এসব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেওয়ার জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

তিনি ‘মিথ্যা অভিযোগে’ আটক সাংবাদিক শফিক রেহমানের মুক্তি ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানোর চক্রান্ত বন্ধ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

একই সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘কুৎসা রটনা’ থেকে বিরত থাকা এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চক্রান্তের মামলায় শফিক রেহমানকে দুই দফায় দশ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় মাহমুদুর রহমানকে ১০ দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ, যার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে ২৫ এপ্রিল।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আমির মাহমুদ খসরু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, সহ তথ্য ওপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি প্রমুখ।