মেডিক্যালে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁসে স্মার্ট কার্ড!

সরকারি মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে স্মার্টকার্ড সদৃশ এক ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিল প্রতারক চক্র। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত শুক্রবার ( ৬ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের অন্তত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

জানা গেছে,  প্রযুক্তির অপব্যাবহারের জন্য অসাধু কারবারিরা পরীক্ষার্থীদের কাছে এক ধরণের স্মার্ট কার্ড সদৃশ ইলেকট্রনিক্স পণ্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছিল। যে কার্ডে মোবাইল ফোনের সব ফিচার বা বৈশিষ্ট্য থাকে। এই কার্ড মানিব্যাগে রেখে সহজেই পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া তার কানের মধ্যে ছোট্ট একটি হিয়ারিং ডিভাইস ( ব্লুটুথের মতো) লাগানো থাকে, যা দেখা যায়না। ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী এই দুই যন্ত্রের সহায়তায় পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে থাকা অসাধু সিন্ডিকেট সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। পরে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার পর ওই প্রশ্নের সেট বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষে তাদের ডিভাইসে উত্তর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে পরীক্ষাও উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়। তবে পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে অগ্রীম ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এরপর ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর চুক্তির বাকি টাকা পরিশোধের কথা ছিল তাদের। এ জন্য পরীক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার মূল সার্টিফিকেট জমা রাখে কারবারিরা।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোনও ধরণের প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। যারা চেষ্টা করেছিল তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।’

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এক ধরণের ইলেকট্রোনিক ডিভাইস ব্যবহারের অপচেষ্টা হয়েছিল। যাদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের তথ্যমতে,  রাজধানীর বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নফাঁসের চেষ্টা করেছিল অসাধু কারবারিরা। এছাড়া ঢাকার বাইরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষাতেও একই ধরণের অপকৌশল ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে  প্রশ্নপত্র ও ফাঁস করার বিভিন্ন ডিভাইসসহ  ১৫-১৬ জনকে  আটক করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে,  গোয়েন্দা পুলিশের  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক সবাই প্রশ্নফাঁসের অপেচষ্টায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এসব সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

 

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা  জানান, এবারে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে একেকজন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করে। এভাবে একেকজন অসাধু কারবারি ৭ থেকে ৯ জনের কাছ থেকে এইসএসসি’র মূল কাগজপত্রসহ অগ্রীম নগদ টাকা নিয়েছিল ।

গোয়েন্দা তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এমন ২০ থেকে ২৫টি সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে। যারা এমবিবিএস ও বুয়েটের মতো ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ে। এজন্য তারা প্রযুক্তির অপব্যবহার ছাড়াও নানা ধরণের কৌশল ব্যবহার করে থাকে।

একটি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আরেক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অপচেষ্টা করে থাকে। এছাড়া ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে অন্তত ৫০০ আইডির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেসব আইডি ব্যবহারকারীরা সবাই প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নামে ও গুজব ছড়িয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকে।