মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় হচ্ছে এমআরটি পুলিশ ইউনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বিশেষ পুলিশ ইউনিট। মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করেন তারা। এবার বাংলাদেশেও মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য গঠিত হচ্ছে আলাদা বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট।

জানা যায়, ঢাকা ও এর আশপাশে পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মিত হচ্ছে। এর আওতায় থাকছে ১২৮ কিলোমিটার যোগাযোগ ব্যবস্থা। আগামী ডিসেম্বরেই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথমাংশ। এর নিরাপত্তায় ছাড় দিতে চায় না মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। তাই চাহিদা অনুযায়ী গঠন করা হচ্ছে এমআরটি পুলিশ ইউনিট।

মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে এটিএম বুথ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ও দোকান থাকবে। প্রতি মুহূর্তে যাতায়াত করবে কয়েক হাজার যাত্রী। এজন্য প্রত্যেকটি স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে পাঁচটি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ডিএমটিসিএলের মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে। এর আওতায় মোট ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। ডিএমটিসিএলের এ যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ৫১টি উড়াল ও ৫৩টি পাতাল স্টেশনসহ মোট ১০৪টি স্টেশন তৈরি হবে। বিশাল এ স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের হাতে দিতে এ বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট গঠন করা হচ্ছে।

পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, এমআরটি পুলিশের জন্য একজন উপ-মহাপরিদর্শক, একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, তিনজন পুলিশ সুপার, চারজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তিনজন সহকারী পুলিশ সুপার, ১৪ জন পরিদর্শক, ২১ জন উপ-পরিদর্শক, একজন সার্জেন্ট, ৭৪ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক, ২৫ জন নায়েক, ৬৩৯ জন কনস্টেবলসহ ৮০৯ জন জনবলের একটি সাংগঠনিক কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ সাংগঠনিক কাঠামো গঠনে প্রস্তাবনা তৈরির দায়িত্বে আছেন পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম) এসএম মোস্তাক আহমেদ।

তিনি বলেন, বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিট বাস্তবায়নে প্রস্তাবনাটি রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। আশা করছি, চলতি মাসেই এটি অনুমোদন হবে। অনুমোদনের পরেই দ্রুত মেট্রোরেল পুলিশের কাজ শুরু হবে। এ ইউনিটের সদস্যদের জন্য থাকবে আলাদা ইউনিফর্ম। তবে ইউনিফর্মটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

পুলিশের অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, মেট্রোরেল দেশের একটি নতুন ট্রানজিট প্রকল্প। তাই স্থাপনার নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও যাত্রী সুরক্ষায় পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট দরকার। এছাড়া মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে এটিএম বুথ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ও দোকান থাকবে। প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করবে। এজন্য প্রত্যেকটি স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হয়ে প্রস্তাবনাটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এটি চালু হবে। মেট্রোরেল চালুর যথেষ্ট আগেই মেট্রোরেল পুলিশ চালু হয়ে যাবে।

অন্যদিকে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে মেট্রোরেল। গত ১২ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় আগারগাঁও পৌঁছায় স্বপ্নের মেট্রোরেল। সেখানে ৪০ মিনিট অবস্থান করে আবার উত্তরার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।

১২ ডিসেম্বর সকালে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে মেট্রোরেল। এর আগে রেললাইন, বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন ও স্টেশনের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করা হয়। পারফরম্যান্স টেস্টের অংশ হিসেবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চলাচল করছে মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের দূরত্ব ১১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার। আগামী ডিসেম্বরে এ অংশে বাণিজ্যিক চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছে ডিএমটিসিএল।

মেট্রোরেলের প্রতি কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।

দিয়াবাড়ির ডিপো থেকে ধাপে ধাপে ট্র্যাকে উঠেছে মেট্রোর একেকটি ট্রেন সেট। শুরুটা হয়েছিল ডিপো থেকে স্টেশন এক পর্যন্ত। এরপর স্টেশন দুই, তিন হয়ে পল্লবী। এরই মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের ট্রায়াল হয়ে গেছে। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদ্যুৎচালিত। সংকেত, যোগাযোগসহ ১৭ থেকে ১৮টি ব্যবস্থা ট্রেন চলার ক্ষেত্রে কাজ করে।

উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। তবে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।