মিয়ানমারের রাখাইনে করোনার চেয়ে সেনা ভয় বেশি

মিয়ানমারের রাখাইনে করোনার চেয়ে সেনা ভয় বেশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। এখানে সবসময় মৃত্যুভয়ে কুঁকড়ে থাকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা অধিবাসী। নানা অজুহাতে গ্রামে গ্রামে নির্বিচার গুলি চালিয়ে মানুষহত্যা করে মিয়ানমারের সেনারা। বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো এ অঞ্চলেও হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। কিন্তু ভাইরাসের চেয়ে স্থানীয় জনসাধারণ বেশি ভীত সেনাবাহিনীকে নিয়ে। করোনায় মৃত্যুর ভয় যতটা না, তার চেয়ে বেশি ভয় সেনাবাহিনীর তাজা বুলেটের। চলমান সংঘর্ষের মধ্যেই মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে রোহিঙ্গারা। আলজাজিরায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে করোনায় আক্রান্ত বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সীমান্তে নিজেদের একটি শহরে লকডাউন আরোপ করেছে চীন।গতসপ্তাহে সীমান্ত এলাকায় দুই ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার পরই পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের রুইলি শহরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শহরটিতে ব্যাপক হারে করোনা পরীক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। ওই শহরটির সঙ্গে মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত যোগাযোগ রয়েছে। সেখান থেকেই নতুন করে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, শহরবাসীকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে থেকেই সীমান্ত পারাপার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মিয়ানমারে জাতিগত বহু সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। এর মধ্যে রাখাইনের আরাকান আর্মি (এএ) অন্যতম। রাখাইনের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে তারা। বেশির ভাগ সমর্থন পায় জাতিগত রাখাইনদের পক্ষ থেকে। রোহিঙ্গা গণহত্যার পরের বছরই আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই শুরু হয়। সম্প্রতি এই লড়াই আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। থার হ্লা (৩২) নামে একজন বলেছেন, ৩ সেপ্টেম্বর রাতের কথা। তিনি বলেছেন, ওই রাতে তিনি প্রায় ৭০ জন মানুষের সঙ্গে একটি পাকা মেঝেতে ঘুমিয়েছিলেন। তার ঘুম আসছিল না। এর কারণ ওই গাদাগাদি করে অবস্থান করা নয়।

থার হ্লা বলেন, আকস্মিকভাবে গুলির শব্দ পেলাম। মনে হল এই কোয়ারেন্টিন সেন্টারটা নিরাপদ নয়। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের কাউকতায় নিজের বাড়ি থেকে টেলিফোনে তিনি বলছিলেন, ওই গুলির শব্দে সেই রাতে কেউ ঘুমাতে পারেননি। পরের সকালে করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট আনতে গেলেন কিছু মানুষ। তারা গেলেন তো গেলেনই। কোয়ারেন্টিন সেন্টারের সবাই যার যার বাড়ি চলে গেলেন। ওই রাতে দুটি গ্রামে হামলা চালানো হয়েছিল। এর একটি গ্রামের ইউ ইয়েট থি আলজাজিরাকে বলেছেন, তার গ্রাম থেকে প্রায় তিন

মাইল দূরে ওই কোয়ারেন্টিন সেন্টার। সেখান থেকে সেদিন সবাই পালিয়েছিল। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ওই রাতে বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়েছে তাদের গ্রামের চারপাশে। তারপর তারা বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।

গ্রামবাসী এ সময় যে যেদিকে পেরেছেন সেদিকে পালিয়ে ছুটেছেন। তার ভাষায়, আমরা জানতাম না, কোথায় গেলে জীবন নিরাপদ হবে। স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ওই দুটি গ্রামের ১৬৬টি বাড়ি ধ্বংস করে

দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে দু’জন পুরুষকে। রাখাইনভিত্তিক মিডিয়া বিষয়ক সংগঠন ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া গ্রুপের মতে, এসব গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। তবে এসব বক্তব্য নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি আলজাজিরা। করোনাভা শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারও এর মোকাবিলা করছে।