মাছের আঁশ রফতানিতে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা

মাছের আঁশ রফতানিতে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা

খুলনা সংবাদদাতা: বাতিল জিনিষ মানেই যে ফেলনা নয়, এটা এখন প্রমাণিত। মাছের আঁশে তৈরি হচ্ছে ওষুধ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রী, ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহৃত হয় মাছের আঁশ।

খুলনার জুলফিকার আলম বলেন, জীবনে কখনও ভাবেননি মাছের আঁশের ব্যবসা করবেন। আর এখন পুরো ধ্যানজ্ঞানই তাঁর এই ফেলনা জিনিসটি। রফতানি তো করছেনই, রীতিমতো দেশে আন্তর্জাতিক মানের প্রক্রিয়াকরণ কারখানা করার চিন্তা করছেন তিনি। প্রায় ১৪ বছর আগে জুলফিকারের সাথে বিদেশি এক আঁশ ক্রেতার সঙ্গে পরিচয় হয় খুলনায়। তার আইডিয়ায় জন্ম হয় প্রথম মাছের আঁশ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। সেই যে হাঁটা শুরু করলাম, আর পেছনে তাকাতে হয়নি জুলফিকার নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তার প্রতিষ্ঠানটির নাম মেক্সিমকো। জুলফিকার বলেন, মা এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির সংক্ষিপ্ত রূপ মেক্সিমকো।

জুলফিকার বলেন, মাছের আঁশের বড় রফতানির গন্তব্য হচ্ছে জাপান। কিন্তু জাপানে সরাসরি পাঠানো যায় না। জাপানি একটি বড় কোম্পানি চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় দুটি আলাদা কোম্পানি খুলেছে। ওখানে আগে পাঠানো হয়। মূল কোম্পানি পরে নিয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়াতেও এখন কারখানা গড়ে উঠেছে। রফতানির জন্য তৈরি করার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে। তাদের সনদ পাওয়ার পরই রফতানি করার অনুমতি মেলে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যামে বছরে ৮০০ থেকে ১ হাজার টন মাছের আঁশ রফতানি করা যায় বলে জানান জুলফিকার আলম।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট তিনটি কারখানা রয়েছে। রফতানি আনুমানিক দেড় লাখ ডলারের পণ্য। জুলফিকার আলম বলেন, আমিই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রফতানি করি। তিনি রফতানি করেন বছরে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ডলারের পণ্য। বাকিটা অন্য দুই কারখানা করে। জুলফিকার বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের এর সঙ্গে যৌথভাবে কিছু করতে চায় জাপানের মূল কোম্পানি। কয়েকবার খুলনা এসেও ঘুরেও গেছে ওই কোম্পানির প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশে একটি কারখানা করার চুক্তি করবে বলে আগামী মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তাদের আবার আসার কথা রয়েছে। এলে আর্থিক চুক্তি হবে মেক্সিমকোর সঙ্গে।

জুলফিকার বলেন, গোটা বিশ্বের এই পণ্যে জাপানি কোম্পানিটিই নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি বলেন, একবারেই ফেলনা একটা জিনিস থেকে আমরা রফতানি আয় করছি। জুলফিকার বলেন, শুরুর দিকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি মাছের আঁশগুলো যাতে ফেলে না দেওয়া হয়। বাজারে বাজারে নিজে ঘুরে বেড়াতেন। বলতেন যত্ম করে এগুলো জমিয়ে রাখতে। বিনিময়ে থোক হিসেবে মাসিক একটা টাকা দিতেন। এখন অবশ্য কেজি দরে কিনতে হয়। জুলফিকার আলম বলেন, এমন কাজের দক্ষতা আছে, এমন মানুষ বেছে নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বর্তমান অবস্থায় এনেছি।

কেবলে খুলনায়ই নয়, এখন দেশজুড়েই তার একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে খুলনা ছাড়াও, ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাছের আঁশ কেনাবেচার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। অন্তত ২০০ লোক সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত। বাজারে যারা মাছ কাটেন তারাই মাছের আঁশ সংগ্রহের পর তা ভালোভাবে পানি ও কেমিক্যাল দিয়ে ধুয়ে রোদে অন্তত দুই দিন শুকিয়ে তা মচমচে করে বাজারজাতের উপযোগী করে তুলছেন। এরপর সংরক্ষণ করে রাখেন। আমাদের প্রতিনিধিরা সেগুলো নিয়ে আসেন। এরপর আমাদের গুদামে রাখা হয়। আঁশের সঙ্গে ফাঁকে কিছু অন্য জিনিস ঢুকে যায়। যেমন পাখনা, লেজের অংশ, কানের অংশ, গাছের পাতা ইত্যাদি। এগুলো বাছাই করে ফেলে দিতে হয়। পরে প্যাকেট করা হয় একেকটি ২৫ কেজি করে। প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা।

মাছ বিক্রির পাশাপাশি এটি বিকল্প পেশা হিসেবেও এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে খুলনায়। মাছের সঙ্গে আঁশ বিক্রি করে খুলেছে অতিরিক্ত আয়ের পথ। এই ফেলনা জিনিসটিও তাই সমান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এদিকে বিভাগীয় শহর খুলনাতে মাছের আঁশের এ ব্যবসা দিন দিন এর ব্যাপক প্রসার ঘটছে বলে মনে করছে মৎস্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।