মাছের আঁশে আসছে ডলার

নিউজ ডেস্ক: ফেলনা মাছের আঁশ এনে দিচ্ছে ডলার। শুনতে অবাক লাগলেও অনেকেই এখন এ ব্যবসার সাথে জড়িত। যশোরের মাছ বাজারগুলোর বটি ওয়ালারা ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন এ আঁশ। তারপর এক-দুই হাত ঘুরে প্রক্রিয়াজাত করনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোয়।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মাছের আঁশ রপ্তানি হচ্ছে দেশ থেকে। বিদেশে এ আঁশ দিয়ে তৈরি হয় ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র, কৃত্রিম কর্নিয়া ও কৃত্রিম হাড়, ওষুধ, মাছ ও মুরগির খাবার, নেইলপালিশ, লিপস্টিকসহ নানা প্রশাধনি।

যশোরের মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে, যশোরে মাছের আঁশের চাহিদা এখন অনেক বেশি। বড় বাজারে নিয়িমিত মাছ কাটেন (বটি ওয়ালা) আল আমিন। মাছ কাটতে প্রতি কেজিতে তিনি নেন ১০ টাকা করে। এর বাইরে মাছের আঁশ বিক্রি করে বছরে কমপক্ষে বাড়তি আয় করছেন ২০ হাজার টাকা। মাছ কাটেন এমন আরো একজন বাবুল হোসেন। তিনি জানান, ‘মাছের আঁশ শুকিয়ে বিদেশেও পাঠানো হয়। এছাড়া মাছের ফুলকা, পিত্ত, চর্বি দিয়ে আরো অনেক রকমের জিনিস তৈরি হয়।’
শহরের শুধু বড় বাজার নয়, আশ পাশের সব বাজারের বটি ওয়ালারাও নাড়িভুড়ি ও আঁশ বিক্রি করে থাকেন। কেউ কেউ বাসা বাড়ি থেকেও মাছের আঁশ সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন।

শহরের বড় মাছ বাজারের একজন আড়তদার মোহাম্মাদ আলী, যিনি প্রতিদিন বিভিন্ন বাজার থেকে কয়েক মণ মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন।

তিনি বলেন, আঁশ শুকিয়ে তিনি চট্টামের হক সাহেব, সিরাজ হাজী, আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ির কাছে বিক্রি করেন। এ আঁশ মণ প্রতি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। তিনি জানান, দেশে এ ব্যবসা প্রথম শুরু করেন ঢাকার শামসুল আলম নামে এক ব্যবসায়ী। যিনি তার জাপানি বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ পেয়ে মাছের আঁশের ব্যবসা শুরু করেন।

মাছের আঁশ দিয়ে আসলে কী হয় ?
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন মাছের আঁশে আছে কোলাজেন ফাইবার আ্যামাইনো এসিড এর মত কয়েকটি গুণ। ফলে এই আঁশ দিয়ে তৈরি হয় পাউডার ঔষুধ শিল্প, প্রসাধনী শিল্প ও খাদ্য শিল্পসহ পরিবেশ রক্ষ্যার নানা সামগ্রি। মাছের আঁশ সংগ্রহের ফলে পরিবেশও দূষণ মুক্ত হচ্ছে বলে পরিবেশবীদদের অভিমত।

ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন, আঁশ সংগ্রহ করার পর সেই আঁশ গুলো পরিষ্কার পানিতে অথবা অল্প গরম পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এমন ভাবে পরিষ্কার করা হয় যেন মাছের গায়ে লেগে থাকা তৈলাক্ত পদার্থ সম্পূর্ণ ধুয়ে যায়। তারপর সামান্য রোদে শুকানোর পর ঝরঝরে করা হয়। এরপরই বিক্রির উপযোগী হয়। অবশ্য কেউ কেউ মিক্সার গ্রান্ডারে গুড়ো করে পাউডার আকারেও মাছের আঁশ বিক্রি করেন।

ব্যবসায়িদের বক্তব্য অনুযায়ী, মাছ হিসেবে দাম ভিন্ন হয়। রুই, কাতলার মত বড় মাছের আঁশের দাম একটু বেশি। চিংড়ি মাছের মাথার খোসার দাম আর একরকম। মাছের ফুলকার দামও আলাদা। প্রতিটা মাছের চর্বিও দাম ভিন্ন।

যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, এই শিল্পকে সামনের দিকে আরো এগিয়ে নেওয়া যায়; সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানাবো।