মস্তিষ্কের ভাষা ‘নিউরন’

মস্তিষ্কের ভাষা ‘নিউরন’

নিউজ ডেস্ক: আমরা যা শিখি, তা লেখা হয় নিউরন নামক কোষে। এরা হলো সংযোগকারী উপাদান। প্রতিটি সংযোগ = এক বিট তথ্য।

কতটা নিউরন আছে আমাদের? হয়তো ১০০ বিলিয়ন। আর নিউরন সংযোগের সংখ্যা প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন। এমনকি ঘুমের মধ্যেও মস্তিষ্ক দোলে, পিটপিট করে, মিটমিট করে। চালাতে থাকে মানুষের জটিল কাজগুলো; যেমন- স্বপ্ন দেখা, মনে রাখা, অনুমান করা। ভাবা যায় আমাদের চিন্তা, লক্ষ্য, কল্পনা – এগুলোর বাস্তব ও বস্তুগত অস্তিত্ব রয়েছে? জ্বী হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভুত শোনালেও অবস্তুগত বিষয় হিসেবে পরিচিত এই ব্যাপারগুলোর বাস্তব ও বস্তুগত অস্তিত্ব রয়েছে। জিজ্ঞেস করতে পারেন, “চিন্তা” জিনিসটা দেখতে তাহলে কেমন? এটা শত শত তড়িৎ রাসায়নিক বিচ্ছুরণ দিয়ে তৈরি!

নিউরোজেনেসিস প্রক্রিয়ায় সারাজীবনই নিউরন উৎপন্ন হতে থাকে। ভ্রূণ অবস্থায় এবং জন্মের পরপরই নিউরনগুলো দ্বিবিভাজিত হতে থাকে (কারণ তখন ওরা গোলাকার থাকে)। পরে সময়ের সাথে গোল নিউরন লতার মত লম্বা হয়ে যায়, যার পক্ষে দ্বিবিভাজন অসম্ভব।

তিনটি উপাদান দিয়ে মস্তিষ্ক বা ঘিলু গঠিত- নিউরন, গ্লিয়া কোষ (নিউরন ছাড়া যেসব কোষ আছে) এবং রক্তনালী।

গ্লিয়া নামক আঠাসদৃশ কোষ নিউরনের শরীর পেঁচিয়ে থাকে। এদের প্রধান কাজ হল- নিউরনের চারপাশে থেকে তাদেরকে এক জায়গায় স্থির রাখা, অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করা, জীবাণু ধ্বংস করা, মৃত নিউরনকে অপসারণ করা, এক নিউরন থেকে আরেক নিউরনকে দূরে রাখা (কারেন্টের তারে আমরা কী দেখি? কপারের বাইরে প্লাস্টিকের আবরণ লাগানো। তেমনি নিউরনগুলোকেও পরষ্পর থেকে দূরে রাখা দরকার, যা গ্লিয়া বা শুয়ান সেল করে থাকে)।

মানব মস্তিষ্কের তথ্য উপাদানের একক হচ্ছে বিট। যা প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন বিট। ইংরেজিতে সবগুলো বিট লিখতে চাইলে জায়গা লাগবে ২ কোটি ভলিউমের বইয়ের সমান, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরির সমান। এর মানে কী? মানে হল, ২০ মিলিয়ন ভলিউম বইয়ের সমান তথ্য আছে আমাদের প্রত্যেকের মগজে!

মস্তিষ্কের লাইব্রেরিতে তথ্যের পরিমাণ জিন লাইব্রেরির চেয়ে ১০,০০০ গুণ বেশি। জিন লাইব্রেরিতে এক শতাব্দীতে একটা শব্দও ঠিকমত পাল্টায় না। অন্যদিকে মস্তিষ্ক হচ্ছে বাঁধাইবিহীন বই। আমরা প্রতিনিয়ত নতুন পৃষ্ঠা, নতুন ভলিউম যোগ করছি। কারণ শিখতে চাওয়ার প্রবল ইচ্ছাই আমাদের টিকে থাকার হাতিয়ার।