মন্ত্রীর আল্টিমেটাম সরাতে পারেনি একটি ট্যানারিও!

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার হয়েছে দশদিন আগেই। তবে সরেনি ১৫৫ ট্যানারির একটিও।

মন্ত্রীর আল্টিমেটাম শেষে প্রথম দফায় ২৮টি ট্যানারি মালিককে উকিল নোটিশ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে পর্যায়ক্রমে এ পর্যন্ত ১৩৩টি ট্যানারি মালিকের বরাবর উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আরো ৯টির নামে নোটিশ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেসব ট্যানারি মালিককেও নোটিশ পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)।

গত ১০ জানুয়ারি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ট্যানারি স্থানান্তরে মালিকদের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলেন, বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে নিতে ব্যর্থ হলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমনকি শিল্পনগরীতে কারখানা মালিকদের নামে প্লট বরাদ্দও বাতিল করা হবে।

মন্ত্রীর আল্টিমেটাম বা উকিল নোটিশ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও প্লট বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন মন্ত্রী। তবে তাতে কাজ হয়নি। আরও কয়েকবার সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে আল্টিমেটাম দেওয়ার পরও ট্যানারি মালিকরা কারখানা সরাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরের মধ্যেই হাজারীবাগ থেকে ১৫৫ ট্যানারি স্থানান্তরে সরকারি নির্দেশনা ছিল। এ সময়সীমা শেষ হওয়ার পরই শিল্পমন্ত্রীর সর্বশেষ আল্টিমেটাম আসে।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, উকিল নোটিশ পাওয়ার পর বেশিরভাগ ট্যানারি মালিক তাদের জবাব দিয়েছেন। নোটিশের জবাবে ট্যানারি মালিকরা কেউ তিন মাস, কেউ চার মাস আবার কেউ এক বছর সময় চেয়েছেন। এর মধ্যে সবাই হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করবেন বলে জানিয়েছেন বিসিককে।

সাভারের বলিয়াপুর ইউনিয়নের হরিণ ধরায় নদী তীরে ১৯৯ দশমিক ৪০ একর জমিতে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি শিল্পনগরী গড়ে তুলছে বিসিক। সেখানে বিএফএলএলএফইএ’র আওতাধীন ১৫৫টি শিল্প ইউনিটের অনুকূলে ২০৫টি প্লট বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ওই ১৫৫ ট্যানারি কারখানা স্থানান্তরিত হবে হাজারীবাগ থেকে।

১ হাজার ৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা চামড়া শিল্পনগরী নামের এ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী জুন মাসে।

বিসিক সূত্র জানায়, মোট ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে ১৪২টিকে নোটিশ দেওয়া হবে। বাকি ১৩টি ট্যানারির বিরুদ্ধে মামলা থাকায় সেগুলোর বিরুদ্ধে এই মুহুর্তে কোনো সিদ্ধান্তে যাবে না বিসিকি। তবে মন্ত্রীর আল্টিমেটামের পর ৫-৭টি ট্যানারি বাদে সবাই সাভারে স্থানান্তরের কাজ শুরু করছে বলে জানা গেছে।

যারা আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে স্থানান্তরের কাজ শুরু করতে পারবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন মাহমুদ মাহিন জানান, উকিল নোটিশ পাওয়ার পর আমাদের অনেকেই স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছেন। আমরা সাভারে যেত আন্তরিক আছি। তবে সেখানে যেতে হলেও সময় লাগবে।

আগামী ছয়মাসের মধ্যে অনেকেই যেতে পারবেন বলেও  জানান তিনি।

বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, আমাদের গ্রুপের অনেককেই বিসিক উকিল নোটিশ দিয়েছে। দিলে কি হবে, যেতে সময় তো লাগবে। তাছাড়া এখনো কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) প্রস্তুত হয়নি। আমরা সেখানে গিয়ে কি করবো? তবে আশা করি, আগামী ছয়মাসের মধ্যে কমপক্ষে ৫০টি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।

চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সিইটিপি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সিইটিপি’র ট্রায়াল ভার্সনে (পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে) যাবো। এরপরই স্থানান্তরে ব্যর্থ ট্যানারি মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে সরেজমিনে ট্যানারি শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, ট্যানারি শিল্পনগরী এলাকায় এখনও সার্ভিস রাস্তা, বিদ্যুৎ লাইন ও গ্যাসের লাইনও পর্যাপ্ত করা হয়নি। অন্যদিকে অধিকাংশ ট্যানারি মালিক কাজই শুরু করেননি। আবার কেউ কেউ সীমানা প্রাচীর করেই বসে আছেন।