ভাসানটেকের আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে

বাস্তবায়নের পথে ভাসানটেকের স্বপ্নের আবাসন প্রকল্প। অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যার পাহাড় ডিঙিয়ে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রæত ভাসানটেক আবাসন প্রকল্প। রাজধানীর মিরপুরের ভাসানটেক এলাকায় প্রায় ৪৭ দশমিক ৯ একর সরকারি জমির ওপর নির্মিত হতে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য আবাসন ভবন। এরই মধ্যে ফ্ল্যাট বরাদ্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে বস্তিবাসী ও ছিন্নমূল নাগরিকের জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও বর্তমানে যে কোনো নাগরিক ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ভ‚মি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প অফিস অথবা সচিবালয়ে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের ৬তলা থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে ফরম কিনতে হবে। এরপর ফরম জমা দেয়ার সময় ৫০ হাজার টাকার ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার জমা দিতে হবে। তারপর ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেলে বাকি টাকা ১৮টি কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পে দুই ধরনের ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করা যাবে। ‘এ’ টাইপের ফ্ল্যাটের জন্য ৫ লাখ ও ‘বি’ টাইপের ফ্ল্যাটের জন্য ৯ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পরে দাম আরো বাড়তে পারে বলেও মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। যদিও ৪ বছর আগে ‘বি’ টাইপের দাম ছিল ৩ লাখ ৫৫ হাজার আর ‘এ’ টাইপের দাম ছিল ২ লাখ টাকা। ‘এ’ টাইপের ফ্ল্যাটে রয়েছে একটি বেডরুম, কিচেন ও বাথ। ‘বি’ টাইপের ফ্ল্যাটে রয়েছে দুটি বেড, এক বাথ ও কিচেন। ‘এ’ টাইপ ২১৫ বর্গফুট আর ‘বি’ টাইপ ৩৯৫ বর্গফুট আয়তনের।
এ ব্যাপরে ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ভাসানটেক প্রকল্পের পরিচালক শামস আল মুজাদ্দেদ আজকালের খবরকে বলেন, এখানে আগের অনিয়ম-দুর্নীতি ছাপিয়ে এখন নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মধ্যে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নতুন বরাদ্দের জন্য আবেদন ফরম আহŸান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্প এলাকাটিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এখন থেকে আর কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হবে না। নির্মাণকাজ দেখভাল করার জন্য একজন প্রকৌশলীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা যায়, নতুন আবেদনের জন্য এরই মধ্যে ৬ হাজার ফরম বিক্রি হয়ে গেছে। প্রকল্প এলাকায় আগের সময়ের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রায় ১ হাজার ২০৭ জনের জন্য ফ্ল্যাট বরাদ্দ রেখে বাকি ফ্ল্যাট লটারির মাধ্যমে নতুনদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে। বর্তমানে ‘এ’ টাইপের তিনটি ও ‘বি’ টাইপের ৯টি ভবনে প্রায় ১ হাজার ২৯৬টি ফ্ল্যাট অসম্পূর্ণ অবস্থায় তৈরি আছে। কিছুটা কাজ করে এগুলো বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত ১৯৯৬ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছিন্নমূল মানুষের জন্য ঢাকায় সরকারি জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে ভ‚মি মন্ত্রণালয়। ১৯৯৮ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। পরে রাজধানীর মিরপুর-১৫ এর ভাসানটেক এলাকায় প্রায় ৪৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় বেসরকারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নর্থ-সাউথ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে (এনএসপিডিএল); কিন্তু তারা শর্ত না মেনে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করে। ২০১০ সালের ১৯ অক্টোবর ওই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করে দেয় সরকার। এরপর ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব আবুবক্কর সিদ্দিকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি ২০১১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত যাচাই-বাছাই শেষে ভ‚মি সচিবের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ অবস্থায় অসমাপ্ত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তমন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ভাসানটেক প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করার দায়িত্ব দেয়া হয় ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের ওপর। আর নির্মাণের দায়িত্ব নেয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয় ছিন্নমূল বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের তালিকা প্রণয়ন করবে ভ‚মি মন্ত্রণালয়। আর তালিকা মোতাবেক ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পরে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আগ্রহ না দেখানোয় বাধ্য হয়ে ভ‚মি মন্ত্রণালয় নিজেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়।
বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তৎকালীন ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রকল্পের পরিচালক করে দায়িত্ব দেন যুগ্ম সচিব শামস আল মুজাদ্দেদকে। এরপর গত বছরের ১৯ জানুয়ারি ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের দখল হওয়া ফ্ল্যাট দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী আগের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনএসপিডিএলের সঙ্গে সব মামলা চুকিয়ে ৯৭ কোটি টাকা দায়দেনা নির্ধারণ করে ভ‚মি মন্ত্রণালয়। ভাসানটেক প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী এখনো বেশির ভাগ কাজ বাকি। কিছু ভবন আংশিক নির্মাণাধীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।