বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হলেও প্রকাশ হয় না

বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদাদাতা: ‘প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ৭ দশক পূর্ণ করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণার মাধ্যমে নানা অবদান রেখে যেমন আলোচনায় এসেছেন এই শিক্ষালয়টির গবেষকরা তেমনি আলোচনায় এসেছে গবেষণা পরিচালনায় নানান প্রতিবন্ধকতাও।
ইউজিসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ অর্থায়নে প্রতি বছর শতাধিক গবেষণা পরিচালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা। তবে সেসব গবেষণার আউটপুট পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষকরা বলছেন, প্রকল্পের ৯০ শতাংশ গবেষণা কোনো জার্নালে প্রকাশিত হয় না। প্রকাশের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, মানহীন গবেষণা, কিছু ক্ষেত্রে শর্তের কড়াকড়ি এর পেছনে দায়ী বলে দাবি প্রবীণ গবেষকদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত গত ৬ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দকৃত মোট অর্থ ছিলো ১৭ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতিবছর গবেষক প্রতি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। এই হিসাবে গত ৬ বছরে প্রায় ৮ শতাধিক গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।

একাডেমিক শাখার উপরেজিস্ট্রার আখতার হোসেন স্বীকার করেন, প্রকল্পের অধিকাংশ গবেষণা শেষ হওয়ার পর কোনো জার্নালে পাবলিশড হয়নি। তবে কিছু গবেষক নিজ দায়িত্বে গবেষণা প্রকাশ করেন, যার হারও কম।

তাহলে গবেষণাগুলোর আউটপুট কিভাবে আসছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেন, গবেষণা প্রকল্প শেষ হওয়ার পর একাডেমিক শাখা-২, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সেমিনার কক্ষ ও অনুষদ কার্যালয়ে একটি করে অভিসন্দর্ভ জমা দেন গবেষক। সেখানেই গবেষক ও শিক্ষার্থীরা পড়ার সুযোগ পান।
অর্থাৎ এসব গবেষণা প্রকল্পের সময় শেষে কিছু কাগজের স্তূপ ছাড়া কিছুই পাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষকরাও স্বীকার করেছেন বিষয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, গবেষণা প্রকল্প শেষ হলে নাম লিপিবদ্ধ করে রিপোর্টগুলো স্তূপ করে রাখা হয়। কেউ খুলেও দেখে না সেগুলো। অন্যদিকে প্রকাশনার জন্য যে খরচ হয় সেটি ব্যক্তিগত অর্থ থেকেই ব্যয় করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১ হাজার টাকাও পান না গবেষক। এজন্য অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন না। গবেষণার ক্ষেত্রে আনপাবলিশড ডাটার কোনো মূল্য নেই বলে দাবি তার।

এদিকে শুধু অর্থনৈতিক বিষয় নয়, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম বলেন, প্রকল্প নেওয়ার সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া গবেষণাটি পাবলিশড করা যাবে না। গবেষণা পাবলিশডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহ ও শর্তের কড়াকড়িও অনেকটা দায়ী বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে মানহীন গবেষণার কথাও বলছেন গবেষকদের কেউ কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের একজন অধ্যাপক তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, পাবলিশড উপযোগী হতে গেলে সেই রকমের ফাইন্ডিংসও দরকার। তড়িঘড়ি করে শেষ করা গবেষণা প্রকল্পের প্রতিবেদনগুলোতে যে পরিমাণ অসংলগ্নতা থাকে, তাতে সেটি প্রকাশযোগ্য থাকে না। অনেকে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন, প্রতিবেদন মূল্যায়ণ করতে গিয়ে এসব দেখতে পেয়েছেন তিনি। এসবের বাইরে কিছু মৌলিক গবেষণাও চোখে পড়েছে যেগুলো প্রকাশ উপযোগী বলে দাবি তার।

এছাড়া মানসম্মত গবেষণা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি বাড়ানো ও প্রকাশের জন্য বরাদ্দ, একইসঙ্গে প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন মসলিন গবেষক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন।

প্রকল্পের গবেষণা শেষ হওয়ার পর জার্নালে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, গবেষণা প্রকল্পের প্রত্যেকটি থেকে কমপক্ষে একটি করে পেপার যাতে পাবলিশড করা হয় সেই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া সেই গবেষণা পাবলিশের ব্যয়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে কিভাবে দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।