বাংলাদেশের গ্যাস বাজার ঘিরে ভারতের মহাপরিকল্পনা

বাংলাদেশের গ্যাস বাজারে ভারতের পরিকল্পনা

নিউজ নাইন২৪, ঢাকা:বাংলাদেশের বাজার ধরতে ৬৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস লাইন স্থাপন করবে ভারতের আদানি গ্যাস লিমিটেড (এজিএল)। একই সঙ্গে পূর্ব ভারতে রান্নার জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ক্রমবর্ধমান বাজারও নিয়ন্ত্রণে নিতে চায় কোম্পানিটি।

বাংলাদেশে বছরে অন্তত দেড় লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে যার মাত্র ২২ হাজার টন দেশে উৎপাদন হয়। গ্যাস সংকটের মধ্যে এমনিতে বাসাবাড়িতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে নিকট ভবিষ্যতে এলপিজি চাহিদা বাড়বে এবং ওই বাড়তি বাজার ধরতেই ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি গ্যাস পাইপ লাইন বসিয়ে উড়িষ্যার ধামরা বন্দরের প্রস্তাবিত আদানির ১৬ লাখ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এলপিজি টার্মিনালের সাথে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল ও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দত্তপুলিয়াকে যুক্ত করবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ভারতের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস রেগুলেটরি বোর্ডের অনুমতির অপেক্ষায় আছে।

এর বিপক্ষে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইরান থেকে গ্যাস আমদানির আগ্রহের কথা শোনা গেলেও আদতে তা কতদূর এগিয়েয়ে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না। বেসরকারি খাতকে এধরনের গ্যাস চাহিদা পূরণের মত সক্ষমতা অর্জনে সরকারের কোনো নজর নেই। যদিও সরকারের জালানি উপদেষ্টা বিদেশে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বাংলাদেশের গ্যাস খাতেই শুধু ভবিষ্যতে ৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে। তবে গ্যাস খাতে এত বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ শুধুমাত্র বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকেই আশা করছে সরকার।

ভারতের আদানি গ্যাস লিমিটেড জানিয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যভাগে এলপিজি টার্মিনাল চালু করবে। ধীরে ধীরে এর ধারণক্ষমতা ২৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। টার্মিনালটি স্থাপনে প্রায় দেড় হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করছে আদানি।

আদানি এন্টারপ্রাইজের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এজিএল ২০০৪ সাল থেকে গুজরাটের বাদাদোরা ও আহমেদাবাদ এবং ২০০৯ সাল থেকে হরিয়ানার ফরিদাবাদে শহরে গ্যাস সরবরাহ করে আসছে।

একই সঙ্গে ভারত ইরান থেকে গ্যাস আমদানির জন্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইরান থেকে গ্যাস আমদানির পর তা বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার সহ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোতে পুনরায় রফতানির জন্যে বিশাল পরিকল্পনা নিয়েই ভারত আগাচ্ছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ভ‚কৌশলগত অবস্থান ব্যবহার করে কোনো বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তাও করছে না।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এমন আশার মধ্যে বরং সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ করে আশেপাশের দেশগুলোতে আমদানিকৃত গ্যাস থেকে শুরু করে জালানি পণ্য পুনরায় রফতানি করার বিষয়টি সরকারের মাথায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে রিফাইনারি ও এলপিজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়নের গতি এতই ধীর গতির যে তাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে ভারত কিংবা অন্যকোনো দেশের জালানি খাতের মহাবিনিয়োগ পরিকল্পনা। এবং এধরনের পরিকল্পনা বাংলাদেশের ভ‚খন্ড ব্যবহার করে হবে কিন্তু বিনিয়োগের সিংহভাগ অর্জন করবে বিদেশি কোম্পানিগুলো মাত্র।