ফালাজ সেচব্যবস্থা

ফালাজ সেচব্যবস্থা

নিউজ ডেস্ক: এক বা একাধিক প্রাকৃতিক পানির উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে সেই পানি ভূগর্ভস্থ স্থায়ী নালার মাধ্যমে দূরের কৃষি এলাকায় নিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানির ব্যবস্থা করার নাম হলো ফালাজ। ফালাজের অর্থ হলো- ধাপে ধাপে ভাগ করা অথবা পানির কূয়া (এক বচন) এবং বহু বচনে এটাকে আফলাজও বলা হয়।

পাহাড়ের গা থেকে প্রবাহিত ছোট ছোট পানির ধারা, ঝর্ণা, পাহাড়ে বৃষ্টিপাতের পানি, কুয়াশা ও আর্দ্রতা থেকে জমা পানিকে পাহাড়ের গা কেটে কেটে নালা তৈরি করে অনেকগুলো ধারাকে একসাথে করে নিচে নামানো হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় নিচু থেকে কিছুটা উপরের দিকে পানি প্রবাহিত হয় (আসলে নিচের দিকের বাঁধ পানি পূর্ণ হয়ে ওপরের সমান হয়ে প্রবাহিত হয়)। পাহাড় থেকে পাওয়া পানির ধারাকে গভীর নালাতে যুক্ত করা হয়। এই নালাতে অথবা নালার আশেপাশে যেখানে পানির স্তর কিছুটা ওপরে সেখানে বেশ কিছু কূয়া খনন করা হয়। এই কূয়াগুলোর পানির ধারা ওই মূল নালাতে সংযুক্ত করা হয়। স্থান ভেদে কূয়ার গভীরতা ১০ মিটার থেকে ২০ মিটারও হতে পারে।

কূয়ার গভীরতা যত হবে নালার গভীরতাও তত বেশি হবে। এবার পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি এবং কূয়ার পানি দীর্ঘ নালা ধরে অভিকর্ষীয় বলের প্রভাবে তুলনামূলক নিচু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। মাটির নিচের এই গভীর নালাগুলো পাথর এবং কোনো কোনো অংশে পোড়ামাটির খাঁজ বসিয়ে তৈরি করা হয়। প্রবাহ অবাধ রাখতে কিছু দূর পর পর বায়ু প্রবেশের জন্য এবং পরিষ্কার করার সুবিধার জন্য বায়ু মুখ বা পিঠ রাখা হয়।

এই পানি প্রবাহ প্রাকৃতিকভাবে অনবরতভাবে চলতে থাকে এবং বৃহৎ ফালাজ ব্যবস্থায় একাধিক ফালাজ যুক্ত করে করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

আল আইন ফালাজের উৎস হলো সীমান্তবর্তী ওমানের আল দাখলিয়া, আল বাতিনা ও আল শারকিয়া অঞ্চলের ফালাজের উপধারা যা ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নালার মাধ্যমে আল আইন ওয়েসিস খেজুর বাগানে এসেছে। আল আইনে অঞ্চলে ১২ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে মোট ২৭টি ফালাজের অস্তিত্ব থাকলেও শহর নির্মাণ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ২১টি ফালাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ৬ টি সক্রিয় আছে এবং তারমধ্যে ৫ টির সাথে যুক্ত হয়েছে ভূগর্ভস্থ পানির পাইপ লাইন।
১৯৪৬ সালে আল আইনের গভর্নর শেখ জায়েদ আল আইন ওয়েসিস ফালাজ সংস্কার করেন।