চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দুর্গম পাহাড়ে সন্ধান মিলেছে পুরোনো তেল খনি

চট্টগ্রামে পুরনো তেল খনির সন্ধান

চট্টগ্রাম: বাঁশখালীর জঙ্গল জলদী পাহাড়ে জলদী রেঞ্জের আওতাধীন দোচাইল্যা নামক এলাকায় গহীন অরণ্যে সন্ধান মিলিছে বৃটিশ আমলের পুরোনো তেল খনি। বর্তমানে যাহা পড়ে আছে জ্বরাজীর্ণ অবস্থায়। দুর্গম ও গহীন পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে মানুষের আসা যাওয়া কম। কয়েকজন পাহাড়ি চাষী ও জীবজন্তুর বিচরণ ছাড়া সাধারণ মানুষের চলাচল খুব কমই দেখা যায়।

পাহাড়ি এলাকায় তেল খনি আবিষ্কারের এমন খবর পেয়ে সোমবার (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় কয়েকজন লোককে সাথে নিয়ে যাওয়া হয় জঙ্গল জলদীর দুর্গম পাহাড় ও গহীন অরণ্যে এই ধরনের একটি ভ-ত্বাত্তিক সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য। প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা হাঁটার রাস্তার দূরত্ব।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় এই তেল খনিটি শতাধিক বছরেরও পুরনো। তৎকালীন বৃটিশ সরকার আমলে এই খনির সন্ধান পাওয়া যায়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করার পর এখানে তেল উৎপাদনের বিভিন্ন স্থাপনাও নির্মাণ করে বৃটিশ সরকার। তারপর এখান থেকেই শুরু হয় তেল উৎপাদনের সুবিশাল লক্ষ্যমাত্রা। এরপর দীর্ঘদিন এখান থেকে তেল উৎপাদন করে আসলেও এই তেল খনির জন্য রাশিয়া এবং ভারতের দুইটি তেল খনি অচল হয়ে যাওয়ার আশংকায় এই তেল খনিটি বৃটিশ সরকারের হস্তক্ষেপে ও দেশীয় কিছু সুবিধাভোগীদের কারণে এই খনিতে শীসা ঢেলে বন্ধ করে দেয়া হয়। গতকাল স্থানীয় আবদুছ ছবুর, পাহাড়ি চাষী মোহাম্মদ আবুল বশর, সেলিমসহ স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা হলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

সরজমিন পরিদর্শনকালে আরো দেখা যায়, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে তেল খনিটির শোধনাগার, তেল পরিশুদ্ধি করার বিশাল ট্যাংক, লোহার সুগভীর তেল উত্তোলনের পাইপ। যেগুলো মাটি ও বিভিন্ন গাছগাছালি উঠে মিশে যাচ্ছে পাহাড়ের সাথে। বাঁশখালী পৌর এলাকার সোজা পূর্ব দিকে জঙ্গল জলদী পাহাড়ের গহীন অরণ্যে অবস্থিত এ স্থানে যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘন্টার মত। পাহাড়ি ছড়া বেয়ে প্রায় ২-৩ মাইল হেটে যেতে হয় ওই স্থানে। এখানে রয়েছে সুবিশাল ও অনেক উচ্চতা সম্পন্ন পাহাড়ি চ‚ড়া। যেগুলোতে রয়েছে হাতির অবাধ বিচরণ। বিশেষ করে তেল খনি এলাকাকে ঘিরে বন্য হাতির পাল সব সময় বিচরণ করতে দেখা যায়।

স্থানীয় প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা ইলিয়াছ সওদাগর জানান, ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালের দিকে এই তেল খনিটির সন্ধান পেলে আমরা সেখানে গিয়ে সরজমিন পরিদর্শন করে তৎকালীন সরকারকে অবহিত করলে তারা দ্রæত গতিতে তেল উৎপাদনে চলে যায়। উৎপাদনের কিছু দিন পর বিদেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের মুখে পড়ে দেশীয় কিছু ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা তেল খনিটিতে সীসা ঢালাই করে। তৎসময়ের তেল খনির শ্রমিক উত্তর জলদী রুহুল্লা পাড়া এলাকার আবদুল করিম জানান দোচাইল্যাতলীতে রয়েছে তখনকার আমলের তেল খনির বিভিন্ন স্থাপনা। ইকোপার্কের পূর্বে ওলু বাগানের পাহাড়েও ছিল এক ব্যারেলের একটি তেল খনি। অন্যটি ছিল পূর্ব চাম্বল গভীর পাহাড়ে। এই পাহাড়ে এখনও হাজার হাজার সিমেন্টের বস্তা পাথর হয়ে আছে ও ৮ ইঞ্চি লোহার পাইপ, ১৩/৫০ ফুট পাইপ আছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরো জানান, দোচাইল্যার উত্তর পার্শ্বে আধা কিলোমিটার পথ ও বিশাল আকারের মাঠ রয়েছে। সেখানে খনি শ্রমিক ও দেশী বিদেশী ইঞ্জিনিয়াররা হেলিকপ্টার যোগে উঠা নামা করতো।

ব্রিটিশ সরকার যদি রাশিয়া ও ভারত সরকারের ইন্ধনে এই তেল খনিটি বন্ধ না করতো, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমান সময়ের চেয়ে আরো অনেক ত্বরান্বিত হতো তাতে কোন সন্দেহ ছিল না। এলাকার জনসাধারণ এই তেল খনি পুনরায় সংস্কার পূর্বক তেল উৎপাদনে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন।

এদিকে বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য এই তেল খনিটি অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখতে পারে। খনিটি যদি পুনরায় সংস্কার করা হয় তাহলে এখান থেকে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ অনেক উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে, সমৃদ্ধিশালী হবে অর্থনৈতিক ভাবে। একটি সূত্র জানায় ৩০শে মার্চ সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার তেল আমদানির জন্য মন্ত্রী সভার ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এতে করে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ সউদী এবং আবুধাবীতে চলে যাচ্ছে। অথচ আমাদের এই খনিটি পুনরায় সংস্কারের মাধ্যমে তেল উৎপাদন করতে পারলে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে আরো উন্নত হবে।