পাবদা রফতানিতে রিগানের মাসিক আয় ৫ লাখ টাকা

নাটোর সংবাদাদাতা: রিগানের একসময় বেকার ছিলেন। পরে বেসরকারি চাকরি শুরু করেন। কিন্তু সেখানে স্থায়ী হতে পারেননি। পরে চাকরি ছেড়ে ২০১৪ সালে নিজ অর্থে শুরু করেছিলেন মৎস্য আড়ত ও দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশীয় প্রজাতির মাছ রফতানি। শুরুতে খুব একটা সফলতা না পেলেও ছাড়েননি ব্যবসা। আঁকড়ে ধরে ছিলেন দীর্ঘ ছয় বছর। তারপর হঠাৎ একদিন ভাবলেন, কীভাবে দেশের বাইরে দেশীয় প্রজাতির মাছ রফতানি করা যায়। যেই ভাবনা সেই কাজ।

২০১৯ সালে শুরু করেন পাবদা মাছ রফতানি। তারপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬০০ মেট্রিক টন পাবদা মাছ বিভিন্ন দেশে রফতানি করেছেন। বর্তমানে ভারতে রফতানি অব্যাহত রয়েছে। তার এখানে কয়েকজন যুবকেরও হয়েছে কর্মসংস্থান। এখন রিগানকে নিয়ে গর্ব করেন তার গ্রামের মানুষ।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান বুলুর ছেলে সফল উদ্যোক্তা রিগান হোসেন।

রিগান হোসেন রাজশাহী কলেজ থেকে ২০১২ সালে মাস্টার্স শেষ করেছেন। তারপর কুমিল্লায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরে তিনি চাকরিটি ছেড়ে পুরোপুরি মাছ চাষে মনোযোগ দেন। এখন তার একটি মৎস্য আড়ত রয়েছে। যেখানে তিনি সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।

জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি হ্যাচারি থেকে খামারিরা পোনা সংগ্রহ করে আনেন। পরে সেগুলো পুকুরে মিশ্র ও দানাদার খাবার খাইয়ে বড় করা হয়। সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে দেড় লাখ টাকা খরচ করে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ বিক্রি করা যায়। পুকুরপাড় থেকেই গড়ে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে পাবদা বিক্রি হয়। সঙ্গে পানির পরিবেশ ঠিক রাখতে পুকুরে রাখা হয় অন্য জাতের মাছ।
মৎস্য বিভাগ জানায়, সাধারণত মার্চের শুরুতে পুকুরে পাবদা পোনা ছাড়া হয় এবং ছয় মাস পর থেকে তা সংগ্রহের উপযোগী হয়। রফতানির পাশাপাশি দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় পাবদা খামারিরা লাভবান হচ্ছেন।

উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ পাবদা। চলনবিল এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সুস্বাদু পাবদা মাছের চাষ। খুব অল্প সময়ে বেকার যুবকরা এ মাছ চাষ করে নিজের পরিবারের অভাব দূর করছেন। অন্যদিকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে সুস্বাদু এ মাছ এখন রফতানি হচ্ছে। খুব অল্প চাষির মধ্য দিয়ে শুরু হলেও এখন জেলায় পাবদাচাষির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫০ জনে। তাদের মধ্যে সফল একজন হলেন রিগান।

রিগান হোসেন বলেন, আমার সফলতার পেছনে আমার পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি আগে মনে করতাম কোনো কিছুর পেছনে লেগে থাকলে একদিন অবশ্যই সফলতা আসবে। তাই আমি বারবার চেষ্টা করে সফল হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে আমার মৎস্য আড়ত ছিল, এখনো আছে। আড়ত শুরু করার পর থেকে মাছগুলো যেত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একদিন ভাবলাম চলনবিলে পাবদা মাছ উৎপাদিত হচ্ছে, এ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু। দেশের বাইরে কীভাবে এ মাছ রফতানি করা যায়। তখন যাদের এলসি করা আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং ২০১৯ সালে প্রথম চালান পাঠাই। পর্যায়ক্রমে ৬০০ মেট্রিক টনের ওপরে পাবদা রফতানি করেছি।

লাভ ও খরচ বিষয়ে রিগান জানান, এখন সপ্তাহের পাঁচ দিন ৫ মেট্রিক টনের ওপরে পাবদা রফতানি হচ্ছে। যা এখন শুধু ভারতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৯ সালে চায়না, সৌদি আরবেও গিয়েছে। প্রতিদিন ৫ মেট্রিক টন পাবদা পাঠাতে তার খরচ হয় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকা। মাসিক আয় ৫ লাখ টাকা। বার্ষিক আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন বলেন, মাছ রফতানি করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন রিগান। সফলতা অর্জনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এখন তিনি। তিনি এখন স্বাবলম্বী। তাকে অনুসরণ করছেন বেকার যুবকরা। বসে না থেকে তারাও শুরু করতে করতে পারে রিগানকে দেখে।

তিনি আরও বলেন, চলনবিলে প্রচুর পরিমাণে মাছ উৎপাদন হয়। পাবদা চাষ লাভজনক। এ চাষ বৃদ্ধিতে নিয়মিত খামারিদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি বিক্রিতেও সহযোগিতা করছে মৎস্য বিভাগ। উৎপাদিত এসব পাবদা মাছ ভারতে এলসির মাধ্যমে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশীয় বিভিন্ন বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভালো লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।