পানি সঙ্কট, নেই কৃষি বিভাগের সহযোগীতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃষ্টির অভাবে খেতের ফসল পুড়ে যাচ্ছে। মাঠের আধাপাকা ধান শেষ মুহূর্তে এসে নষ্ট হচ্ছে। পুরাপুরি নষ্ট হওয়া ঠেকাতে অনেকে বাধ্য হয়ে আধা পাকা ধান কেটে ফেলছেন। বৃষ্টির অভাবে নতুন করে চাষ করা যাচ্ছে না। ফলে পতিত পড়ে আছে অনেক জমি।

যারা সেচ দিয়ে পাট বীজ বুনেছিলেন তারাও পড়ে গেছেন সংকটে। চারা গাছগুলোকে বাঁচাতে সেচের প্রয়োজন। কিন্তু অগভীর (শ্যালো) নলকূপ লেয়ার ফেল করেছে। খাবার পানির জন্যও চলছে হাহাকার। নলকূপে পানি উঠেছে না। যারা মোটর বসিয়েছিলেন তারাও পানি পাচ্ছেন না। একমাত্র সাবমার্সিবল দিয়ে পানি তোলা যাচ্ছে। ফলে মার্সিবল ডিলারের দোকানে বাড়ছে ভিড়, বেড়েছে দাম। সাব মার্সিবল কিনতে পারলেও মিস্ত্রী পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। বৃষ্টির জন্য মুসল্লিরা এস্তেস্কার নামাজও পড়ছেন।

পাবনার সাঁথিয়া ও সুজানগরের বেশ কিছু গ্রাম ও মাঠ ঘুরে পানি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগের এমন করুণ চিত্র দেখা যায়।

বামনডাঙ্গা গ্রামের চাষি হোসেন আলী জানান, তার খেতে আধাপাকা ধান। এ সময়ে এসে জমিতে পানি নেই। শ্যালোতে পানি উঠছে না। তার খেতে পাকা ফসল চোখের সামনে নষ্ট হওয়ার পথে। সহসা বৃষ্টি না হলে তার জমির ধার পুড়ে যাবে। হায়দার আলী নামের এক চাষির ধান খরায় পুড়ে গেছে। তার পাশের খেতে আধাপাক ধান কাটতে দেখা গেল বেশ কিছু চাষিকে। চাষিরা জানান, পানির অভাবেই তারা আধাপাকা ধান কেটে ফেলছেন। বৃষ্টি না হলে পুরা খেতই নষ্ট হয়ে যাবে।

চাষিদের অভিযোগ, তাদের করণীয় সম্বন্ধে কৃষি বিভাগের কাউকে তারা পান না।

সাঁথিয়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের শ্যালো মালিক জয়নাল জানান, আজ তার শ্যালো লেয়ার ফেল করেছে। এতে চাষিদের পাশাপাশি তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ চাষিরা ভালো ফলন পেলে তিনিও ভালো একটা অংশ পেতেন।

তিনি বলেন, তার খেতের পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন গেছে। সহজে একটি সংযোগ পেলে উপকৃত হতেন।

সাঁথিয়া-সুজানগর উপজেলা সন্নিহিত বিল গ্যারকায় দেখা গেছে, চাষিরা আগে সেচ দিয়ে পাট বুনেছিলেন। চারা গজানোর পর খরায় চারা টিকছে না।
চাষিরা জানান, তাদের অভিজ্ঞতা মতে এতদিনে বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তাই ক্যানেলের পানি দিয়ে তারা সেচ দিয়ে চারাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এতে তাদের বাড়তি শ্রমিকসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী মাশফুকুল হাসান জানান, এখন পল্লী বিদ্যুৎ থেকে কৃষি জমির জন্য সংযোগ নেয়া অনেক সহজ করা হয়েছে। ট্রান্সফর্মারের দাম, সেটি সংযোজনের জন্যও কোনো ফি দিতে হয় না। শুধু উপজেলা সেচ কমিটি থেকে সরকারি বিধি মোতাবেক রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হয়। কৃষকরা এ সুবিধাটি গ্রহণ করলে তাদের সেচ সংকট বহুলাংশে কমে যেতে পারে। তিনি জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ছাড়াও চাষিরা এ বিষয়টি কৃষি কর্মীদের মাধ্যমেও জানতে পারেন।

এদিকে পাবনার সাঁথিয়া, বেড়া, সুজানগরের বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সুজানগর উপজেলার বেশিরভাগ নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। অগভীর নলকূপেও পানি উঠছে না।

সুজানগর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পৌরসভাসহ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রায় ৭০ হাজার হস্তচালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে। উপজেলায় সাধারণত পানির স্তর গড়ে ৪০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে। বেশিরভাগ এলাকায় এ স্তরে পৌঁছালেই পানি পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। ১০০ থেকে ১৩০ ফুট গভীরেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা।
ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। রাতে অথবা ভোরে সামান্য পানি ওঠে।

অপরদিকে পাবনার সাঁথিয়ায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় অধিকাংশ নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। ফলে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে সাধারণ মানুষ। অস্বাভাবিকভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে অবস্থা প্রকট হওয়ায় এই রমজানে দিশেহারা এলাকাবাসী। পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় নলকূপ ও অগভীর নলকূপে পানি উঠছে না। প্রতি ১০টি নলকূপের মধ্যে ৮টিই অকেজো হয়েছে। ২-১টিতে সামান্য পানি মিলছে। এছাড়া নলকূপ ও বিদ্যুৎচালিত মোটরে পানি না ওঠায় সামর্থ্যবানরা সাবমার্সিবল কিনছেন ব্যাপক হারে। সাব মার্সিবল ও পাইপের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়ে গেছে।