পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে অপপ্রচার: ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদককে নোটিশ

ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদককে নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় একটি মন্তব্য-প্রতিবেদনে পাকিস্তান-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার করায় দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ পত্রিকাটির প্রকাশককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশটি বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান শরীয়তপুরীর পক্ষ থেকে পাঠিয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট মুহম্মদ মাসুদুজ্জামান।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ভোরের কাগজ পত্রিকাটির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য পাকিস্তান নাকি ক্ষমা চায়নি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, পাকিস্তান ১৯৭৪ সালেই লিখিত আকারে বাংলাদেশের কাছে মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য “নিন্দা ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছিল। ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল তারিখে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বারা স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক “দিল্লি এগ্রিমেন্ট”-এ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধসমূহের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ভাষায় বিবৃতি দেয়া হয়।

উক্ত চুক্তিতে আরো বলা হয়েছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণের কাছে আবেদন করেছেন যেন তারা তাদের (পাকিস্তানকে) ক্ষমা করে দেন এবং অতীতের কথা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যান। একইভাবে, বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে সংঘটিত নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে বলেন, তিনিও চান বাংলাদেশের জনগণ সেসব ক্ষমা করে, অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যাক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, “কিভাবে ক্ষমা করতে হয়, বাংলাদেশের মানুষ তা ভালোই জানে।”

পরবর্তীতে ২০০২ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ঢাকায় এক সরকারি সফরে এসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের মন্তব্য খাতায় লিখেছিলেন, “আপনাদের পাকিস্তানি ভাই ও বোনেরা একাত্তরের ঘটনাবলির জন্য আপনাদের বেদনার সাথে একাত্মতা বোধ করে। সেই দুর্ভাগ্যজনক সময়ে যে মাত্রাতিরিক্ত ঘটনা ঘটে, তা দুঃখজনক।” তৎকালে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের এই মন্তব্য বহু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল।

নোটিশে আরো বলা হয়, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “বর্তমান মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি মহল পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কাজে নেমেছে।” প্রতিবেদনের এই অংশটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন সরকারের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।

এভাবে আরও বেশ কয়েকটি অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচারের খন্ডন করে বলা হয়, ভোরের কাগজের প্রতিবেদনটি এভাবেই মিথ্যা, ভুলভাল, অজ্ঞতা ও বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। এমনকি, ভোরের কাগজের সম্পাদক এই মন্তব্যও করেছে যে, “….আওয়ামী লীগ আপস করছে ১৯৭১-এ পরাজিত ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গে’! প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ কখনোই ১৯৭১-এ পরাজিত ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করেনি। আওয়ামী লীগ সরকারই বহু চ্যালেঞ্জ নিয়ে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে ও অনেকের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছে।

নোটিশে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়টি বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সূচিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন সরকার সবসময়ই ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন সরকারের আমলে আমেরিকা-রাশিয়া, চীন-ভারতসহ সকল বিশ্বশক্তির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারটিও বর্তমান সরকারের ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির অংশ। এই প্রক্রিয়ার সাথে তথাকথিত “১৯৭১-এ পরাজিত ধর্মান্ধ শক্তি” কিংবা “পাকিস্তানপন্থি মহল”-এর কোনো সম্পর্ক নেই। উক্ত পত্রিকা পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়াকে ইস্যু করে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রিন্ট মিডিয়ায় ও অনলাইনে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা” – এই নীতি হবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি। জাতিসংঘের অন্যতম সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারটি পুরোপুরিই বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত। বর্তমান সরকারের একটি সংবিধানসম্মত পদক্ষপকে ইস্যু বানিয়ে নোটিশগ্রহীতাগণ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে প্রিন্ট মিডিয়ায় ও অনলাইনে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই ধরনের মিথ্যা ও আক্রমণাত্মক তথ্য প্রকাশ “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮”-এর ২৫ ধারার আওতায় অপরাধ।

তাই নোটিশে দাবি করা হয়, নোটিশ পাওয়ার ২ (দুই) দিনের মধ্যে তারা যেন এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে এবং উক্ত প্রতিবেদনের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।