পদ্মায় বাড়ছে পানি, ভাঙছে আবাদি জমি

যমুনায় পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙনও বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজবাড়ীর পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ভাঙনে শত শত বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ থেকে ২০ দিন ধরে নতুন করে জেলার গোয়ালন্দ, সদর ও কালুখালী উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এতে ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি চাষিরা আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন।

এ কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। ব্যহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন। বিগত ৬ থেকে ৭ বছর ধরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, ফসল ও বিভিন্ন স্থাপনা। প্রতি বছর নদী ভাঙনে রাজবাড়ী জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চল ক্রমান্বয়ে বিলীন হয়ে ছোট হয়ে আসছে এর মানচিত্র।

নদী তীরবর্তী অঞ্চলের উর্বরা বিভিন্ন ধরনের আবাদি জমিতে ধান, পাট, তিল, বাদাম, ভুট্টা, পটল, টমেটো ও মরিচসহ সব ধরনের সবজি চাষ হতো। কিন্তু এ ক্রমান্বয়ে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে এ অঞ্চলের কৃষি জমি এখন নেই বললেই চলে। কালের বিবর্তনে এখানকার জনবসতি ও ফসলি জমিগুলো নদীতে বিলিন হয়ে পদ্মা নদী আরো প্রসারিত হয়েছে। আর নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

এক সময় এ নদী অঞ্চলের উৎপাদিত ফসল রাজবাড়ী জেলাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হতো। যে পরিমান কৃষি জমি রয়েছে তাও এখন পদ্মার ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে। ভাঙতে ভাঙতে এসব অঞ্চলের কৃষকেরা এখন দিশেহারা।

একদিকে বাড়িঘর ভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাই হারিয়ে নিঃস্ব, অন্যদিকে কৃষি জমি ও ফসল হারিয়ে নিঃস্ব জীবন যাপন করতে হচ্ছে নদী ভাঙন কবলিতা এসব মানুষদের। এখনও অবশিষ্ট এ জমিগুলো আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চান এখানকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তবে সব সময়ই তাদের একটি দাবি থাকে, এ নদী ভাঙন অঞ্চল যেন সরকার দ্রুত রক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেয়।
রাজবাড়ী জেলাটি পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই পাঁচটি উপজেলাই নদী ভাঙনের তীব্রতা রয়েছে প্রচ-। এর মধ্যে গোয়ালন্দ, সদর, কালুখালী ও পাংশা এই চারটি উপজেলা পদ্মা নদী তীরবর্তী হওয়ায় প্রতি বছরই এখানকার ফসলি জমি ও মানুষের বাড়িঘর ভাঙনের কবলে পড়ে। নদী তীরবর্তী এ অঞ্চলগুলোতে প্রায় লাখো মানুষের বসবাস। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ফসল, ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি বিলিন হয়ে এখানকার সাধারণ মানুষ কষ্টে জীবন যাপন করছেন। আর বর্ষা মৌসুম এলেই তারা আতঙ্কে থাকেন নদী ভাঙনের।

ছবিতে গত বছর ছোট ভাকলা এলাকার অন্তার মোড় বেড়িবাঁধ রক্ষায় ভাঙন রোধে সিসি ব্লক ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর ভাঙনে সেখানে সিসি ব্লক থেকে বাঁধের প্রায় ১শ’ ফুটেরও বেশি স্থান নদী ভাঙনে ইতমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার, দেবগ্রাম, দৌলতদিয়, ছোটভাকলা, সদরের বরাট, মিজানপুর, কালুখালীর রতনদিয়া ও কালিকাপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষেরা বলছেন, প্রতি বছরই তাদের ফসলি জমি, ফসল নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এতে তারা কৃষি জমি ও ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে যে পরিমান নদী ভাঙন হচ্ছে, এতে তাদের আবাদ করা কৃষি জমি বিলীন হচ্ছে। ধান, পাট, বাদাম, তিল টমেটো, পাটলসহ সব ধরনরে ধরন্ত কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীনের ফলে আর্থিকভাবে লোকসান হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত তাদের এ অঞ্চল নদী রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়নি কতৃপক্ষ। অতি দ্রুত সরকারের কাছে এ ভাঙন এলাকা রক্ষার দাবি জানান ভাঙন কবলিতরা।