দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে তার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রেসিডেন্ট এম এ মালেক। এ বিষয়ে ব্রিটিশ আইনজীবীরা বলছেন, পরোয়ানা ও দণ্ডাদেশ নিয়ে বাংলাদেশে পা দেওয়া মাত্র গ্রেপ্তার হবেন বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির খবরে এসব তথ্য জানা যায়।

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মাকে দেখতে লন্ডন প্রবাসী তারেক রহমান কি তাহলে বাংলাদেশে ফিরছেন? বা দেশে ফিরতে হলে কি ধরনের আইনি বাধার মুখে পড়তে পারেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান?

ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ‘কনভিক্টেড যদি হয় তবে তারেক রহমান দেশে ফিরলেই গ্রেপ্তার হবেন। মাকে দেখুক না দেখুক সেটা পরের কথা। কিন্তু ইট ইজ অবলিগেশন অব বাংলাদেশ পুলিশ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট অ্যান্ড দ্য এয়ারপোর্ট টু ডিটেইন হিম। এই পরিস্থিতিতে এটি অত্যন্ত কঠিন প্রশ্ন যে আদৌ উনি বাংলাদেশে যেতে পারবেন কি না বা আদৌ উনি যেতে চাইবেন কিনা।’

তবে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতার পাশাপাশি হাইকোর্টে রিট করলে আদালতের এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।

ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যদি এটা প্রমাণ করতে পারে যে এটার সাংবিধানিক রাইট আছে বা সাংবিধানিক রাইটের বরখেলাপ হচ্ছে… উনার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা করতে বাইরে আসতে যদি না দেওয়া হয়, সেটা যদি কনভিন্স করতে পারে হাইকোর্টে। হাইকোর্ট ক্যান মেক অ্যান অর্ডার।

অন্যদিকে, যে কোনো পরিস্থিতিতে তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি এম এ মালেক।

তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি তো নিচ্ছেনই। অচিরেই দেখবেন একটা গুড নিউজ, আমরা যাব। বাংলাদেশ হাইকমিশনে তো উনার আবেদন করার প্রশ্নই ওঠে না। রিনিউ করার প্রয়োজন হলে সময়মতো নিশ্চয়ই হয়তো রিনিউ করবেন। রিনিউ ছাড়া তো আর যাবেন না।’

তবে, তারেক রহমানের হালনাগাদ বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকায় তাকে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরতে হলে দ্রুত ট্রাভেল ডকুমেন্ট অথবা ব্রিটিশ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ সিলমোহরের জন্য আবেদন করতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে কোনো আবেদন করা হয়নি।

তা‌রেক রহমান স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান‌কে নি‌য়ে লন্ড‌নের কিংস্টন এলাকার এক‌টি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। পা‌শের এক‌টি বাড়িতে থাকেন তার ছোট ভাই মরহুম আরাফাত রহমান কো‌কোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিথি ও তার দুই কন‌্যা।

জানা গে‌ছে, ২০০৮ সা‌লে ব্রিটেনে আসার পর দেশটির কাছে রাজ‌নৈ‌তিক আশ্রয়ের আবেদন করেন তা‌রেক রহমান। তার সে সময়কার শারী‌রিক, রাজ‌নৈ‌তিক অবস্থা বি‌বেচনা ক‌রে ব্রিটে‌নের ইমি‌গ্রেশন বিভাগ তাকে সে দেশে বসবা‌সের অনু‌মোদন দেয়। ওই প্র‌ক্রিয়া শে‌ষে ব্রি‌টে‌নের বিদ্যমান ই‌মি‌গ্রেশন আইন অনুযায়ী ২০১৩ সা‌লে দেশটিতে স্থায়ীভা‌বে বসবাসের অনু‌মোদন পান তা‌রেক রহমান।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান। এছাড়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনখালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন দুই বছর। পরিবারের আবেদনে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ। এর মধ্যে গত এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।