দুশত পঞ্চাশ টাকা।।

প্রখর রোদ, কি অদ্ভুত গরম,খনে খনে পিপাসার যন্ত্রণা।রোদের তেজ দেখলে মনে হয় ভরা যৌবনের তেজদ্দীপ্ত।ওহ্ একটুতেই গা ঘেমে চুপচুপে। এই রোদ্রের মাঝেই মহের দাদাকে দেখলাম মিষ্টি আলু বিক্রি করছে।বয়স তার পয়ষট্টি কি সত্তর।এই বয়সেও তাকে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে সহস্তে। পরিবারে একদা তিন মেয়ে ও দুই ছেলে ছিল।সামাজিক রীতি বন্ধন আর একক পরিবার প্রথার কাছে হার মেনে যৌথ পরিবারটি খন্ড-বিখন্ড।মেয়ে তিনটের বিয়ে হয়েছে বার কি ষোলের চৌকাঠ পেরোবার ঠিক পরেই।ছেলে দুটোও বিয়ে করে বৌ বাচ্চা নিয়ে ভিন্ন ভাতে দিশারী। বৃদ্ধ বাবা মা খেলো কি উপস দেখার কেউ নেই।তাই তো মহের দাদা কে এই বয়সেও অল্প পূঁজিতে নাম মাত্র লাভে দিনের রুজি যোগাতে হয়। মহের দাদার পুজি মাত্র দুশত পঞ্চাশ টাকা। নাম মাত্র পুঁজিতে তাকে প্রতিদিনের আহার্য যোগাতে হয়। এই দুশত পঞ্চাশ টাকাতেই সিজনাল বিজনেস করে প্রতিদিনের আহার যোগাতে হয়।কখনও মিষ্টি আলু,কখনও পেয়ারা,কখনও আমড়া,কখনও বা তেঁতুল কিংবা জলপাইয়ের আচার।

এই তো সেদিন দেখলাম মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে স্কুল মাঠে বিক্রি করছে। কৌতূহল বসত দাদার পাশে গিয়ে বসলাম।দেখলাম নাম মাত্র লাভে স্কুলের ছাত্রদের কাছে মিষ্টি আলু বিক্রি করছেন।তার মোট লাভের পরিমান টা পঞ্চাশ টাকা মাত্র।এ পঞ্চাশ টাকাই তার এক মাত্র ভরসা। এ টাকাতেই অসুস্থ স্ত্রী ও তার দুবেলা আহার মিটাতে হয়।যেদিন স্কুল বন্ধ সে দিন হয়তো না খেয়ে থাকতে হয় বুড়া বুড়িকে। না হয় বাকি বা ধার দেনায় দিন চলে যায়। সেদিন খুব আফসোস করে বলছিল দাদা, শরীরটা আর পারে না,পা নিয়ে হাটতে পারি না।এই ধান কাটার সিজন গেলো যদি কামলা দিতে পারতাম অন্তত বছরের রুজি টা তো নিশ্চিৎ হতো। নির্বাক, নিস্তবদ্ধ হয়ে গেলাম। এক পা যার কবরে চলে গেছে,শরীরে শক্তি বালাই নেই,চোখ দুটো ঝাপসা,দশ হাত দুরে কে দেখার সাধ্য নেই।সেই কিনা এখন কায়িক পরিশ্রমের অসাধ্য চিন্তা করছেন।।কিছু বলতে পারলাম না।এই দুশত পঞ্চাশ টাকা পূঁজির সৎ মানুষটির মনোবল আর সাহস আমায় সেদিন মুগ্ধ করছিল। আবহমান বাংলার সামাজিক বন্ধনগুলো বেশ ঠুনকো।সেখানে পিতা মাতা,ছেলে মেয়ের মধুর সম্পর্ক বিয়ের আগ পর্যন্ত। বিয়ের পর থেকে শুরু হয় তিক্ত অসহনীয় জীবন।

মহেরেরা বয়সের ভারে নুয়ে পরলেও এখনও স্বপ্ন দেখে শরীর রক্ত পানি করে দুমুঠো আহার যোগানোর। কুলাঙ্গার সন্তানের ভরসায় চেয়ে থাকে না ,চেয়ে থাকে দুশত পঞ্চাশ টাকার লভ্যাংশের উপর। যাই হোক এই মহের দাদার ছেলেকেই দেখলাম দুশত পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ভিন দেশী পতাকা কিনে ইয়া বড় বাঁশের সঙ্গে লটকিয়ে দিয়েছেন।বাবা পূঁজির অভাবে না খেয়ে মরছে সেটা দেখার নেই।এত কষ্ট করে মানুষ করলো।সে সব আজ অসাড়। আরেক ছেলেকে দেখলাম ভিন দেশী দামি জার্সি পরে ঘুরছে।বৃদ্ধ বাবা মা কিন্ত না খাওয়া। চোখে পড়লো না মা বাবার কষ্ট। হায় হতভাগা ‍নির্বোধ সন্তান!

যাই হোক এটা কেবল একটা গল্প মাত্র,এদেশের গ্রামে গঞ্জে,ওলিতে গলিতে হাজারো মানুষের সন্ধান মিলবে যারা দিনে একবেলা খেতে পায় না। শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিনে দেখতে পা্ই শত ক্ষুধার্তের খাবার সন্ধানের অমানবিক চিত্র। এদের নিয়ে চিন্তা করা কেউ নেই,নেই কেই এদের প্রতি উৎকট আবেগ দেখাবার।।যেমনটা দেখি ভিন দেশ ব্রাজিল জার্মান আর্জেন্টিনা প্রীতি।বড় হাসি পায়। মানছি খেলা অবসর বিনোদনের সহজ লভ্য উপাদান।কিন্ত সুখটা ‍কি সেটাই বুঝিনা। এটাই অাবেগ,পাগলামির অাবেগ। আসুন ভিন দেশ প্রীতি পরিহার করি.যেই টাকাটা ভিনদেশী পতাক বা জার্সী কেনার জন্য খরচ করবো,সেই টাকাটা যার যার যায়গা থেকে একজন মহের দাদা হাতে তুলে দেই।তাতে অন্তত একজন মহের দাদা সস্থির নিশ্বাস নিতে পারবে। অাসুন নিজ দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আজ তব সাবার মুখরিত স্লোগান হোক জার্মান ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার পতাকা নয়. লাল সবুজের পতাকা উড়াই..।। যেন গর্ভে বুক ভরে যায়..

 

লেখক:  মো: লোকমান হোসাইন

বিএসএস, এমএসএস,

রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়