দুই শিশু খুনে পুলিশের কাছেও স্বীকারোক্তি মাহফুজার

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: দুই সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করে র‌্যাবকে যে কথা বলেছিলেন মাহফুজা মালেক জেসমিন, পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি একই কথা বলছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রামপুরা থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘আপাতত বক্তব্য অনেকটাই মিলে যায়। তারপরও এতে অন্য কোনো বিষয় বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় কি না, সেটি তদন্ত করে দেখব।’

দুই সন্তান নুসরাত আমান অরণী (১৪) ও আমান আলভী (৬) হত্যার ঘটনায় তাদের বাবা আমানুল্লাহ স্ত্রীকে আসামি করে যে মামলাটি করেছেন, তা তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন পরিদর্শক মুস্তাফিজ।

দুই শিশুকে দাফনের পর মাহফুজাকে আটক করে বৃহস্পতিবার ঢাকায় নিয়ে আসে র‌্যাব। শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানিয়েছিল, সন্তানদের ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা’ থেকে নিজের স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মাহফুজা।
সন্তান হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারকারী মাহফুজার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন ইতোমধ্যে উঠেছে। তবে র‌্যাব বলছে, তাদের কাছে মানসিকভাবে সুস্থই মনে হয়েছে এই নারীকে।

মাহফুজা এখন রামপুরা থানায় রয়েছেন। দুজন নারী পুলিশের পাহারায় তিনি মহিলাদের হাজতখানায় রয়েছেন বলে রামপুরা থানার এসআই সীমা আক্তার শনিবার সকালে জানান।

ওই হাজতে অন্য কোনো নারী আসামি না থাকায় তিনি একাই অবস্থান করছেন।
‘শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পরিবারের কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য কেউ খাবারও পাঠায়নি।’

মাহফুজা ও তার স্বামী আমানুল্লাহ সম্পর্কে চাচাত ভাই-বোন। পারিবারিক সম্মতিতে দেড় দশক আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল।
মাহফুজার যে স্বীকারোক্তির কথা র‌্যাব বলছে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার ভাই জাকির হোসেন সরকার।
তিনি একদিন আগেই বলেন, ‘সে তার সন্তানদের অনেক ভালবাসতো। র‌্যাব বললেও আমার বোন তো নিজ মুখে সবার সামনে বলেনি যে সে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি শনিবার সকালে বলেন, ‘গত রাতে থানায় আনার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সে খুব স্বাভাবিকভাবে বলছে, সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকায় তাদের হত্যা করেছি।’

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রীর বাসা থেকে অরণী ও আলভীকে নিসাড় অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে খাবারে বিষষ্ক্রিয়া সন্দেহের কথা বলা হয়েছিল।

পরদিন ময়নাতদন্তে চিকিৎসকরা শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পান। এরপর র‌্যাব-পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। র‌্যাব বলছে, ওই বিকালে দুই সন্তানের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন মাহফুজা।
‘ঘটনার দিন কী হয়েছিল, সে সম্পর্কে জানতে নিহতদের দাদিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে,’ বলেন তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজ।

মাহফুজার সঙ্গে শিশু দুটির বাবা আমানুল্লাহকেও জামালপুর থেকে ধরে নিয়ে এসেছিল র‌্যাব। র‌্যাব মাহফুজার দায় স্বীকারের বক্তব্য দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে সন্তান হত্যার মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ বলেন, ‘তদন্তের প্রয়োজনে নিহতদের বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অনেক সময় যোগাযোগের দরকার হয়। তবে প্রায়ই তারা নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখছেন।’