দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সাফল্য

দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সাফল্য

খুলনা সংবাদদাতা: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মতো উপকূলীয় অঞ্চলের সুস্বাদু দাতিনা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। ইনস্টিটিউটের খুলনার পাইকগাছায় লোনাপানি কেন্দ্রে ৪ বছর ধরে দাতিনা মাছের ওপর গবেষণা করে চলতি সপ্তাহে এ সফলতা অর্জন করে। গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. লতিফুল ইসলাম।

বিএফআরআই সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে দাতিনার তিনটি প্রজাতি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এ মাছটি ‘সাদা দাইতনা’ নামে অধিক পরিচিত। এ মাছে কাঁটা কম এবং খেতে সুস্বাদু। গবেষণার জন্য এ মাছের পোনা প্রথম ২০১৭-১৮ অর্থবছরে খুলনার শিবসা নদী থেকে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রের পুকুরে তা লালন-পালন করে আবদ্ধ পুকুর ডোবায় প্রচলিত ভাসমান খাবারে অভ্যস্তকরণের মাধ্যমে প্রজননক্ষম মাছে পরিণত করা হয়েছে। দাতিনা মাছের এ প্রজাতিটি দেখতে সাদা ও গড়ে ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের হয়; সর্বোচ্চ ১২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম হচ্ছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাস অর্থাৎ এ মাছটি শীতকালে প্রজনন করে। দুবছর বয়সে ২শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম ওজন হলেই এরা প্রজননক্ষম হয়ে যায় এবং ডিম ধারণক্ষমতা গড়ে ৩৫০০। পরিপক্ব মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে গবেষণা কেন্দ্রের হ্যাচারিতে হরমোন প্রয়োগের মাধ্যমে এবার সর্বাধিক পোনা উৎপাদন সফলতা অর্জিত হয়েছে। হ্যাচারিতে উৎপাদিত পোনাকে এখন রটিফার জাতীয় খাবার দেওয়া হচ্ছে। উৎপাদিত রেণু পোনার বয়স এখন ১২ দিন।
সংশ্লিষ্ট গবেষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিশে^র দুয়েকটি দেশে দাতিনার খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস এবং ডিম ধারণক্ষমতা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হলেও এর প্রজনন সম্পর্কিত কোনো গবেষণা তথ্য পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় দাতিনা মাছের এ প্রজনন সফলতা বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে দেশীয় মাছ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। প্রতিষ্ঠান থেকে ইতোমধ্যে ২৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন সক্ষম হয়েছে। ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশীয় মাছের ‘লাইভজিন ব্যাংক’।