তিন দশক পর ফের উত্তপ্ত চীন-ইইউ সম্পর্ক, পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তিন দশকেরও বেশি সময় পর আবারও মুখোমুখি অবস্থানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং চীন। জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়ন ইস্যুতে রীতিমতো পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুই পক্ষ। খবর রয়টার্সের।

উইঘুরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদের মিত্র ইইউ এ বিষয়ে অনেকটাই নীরব। বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য তাদের কখনোই খুব একটা উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি।

তবে সোমবার চীনের এক শীর্ষ নিরাপত্তা পরিচালকসহ চার কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন জিনজিয়াংয়ের জননিরাপত্তা ব্যুরোর পরিচালক চেন মিংগুয়ো। ইইউর অভিযোগ, চেন ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’-এর জন্য দায়ী।

ইইউর অফিসিয়াল জার্নালে বলা হয়েছে, উইঘুরসহ অন্য মুসলিম জাতিগত সংখ্যালঘুদের বেআইনিভাবে বন্দি করা এবং তাদের ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা নিয়মতান্ত্রিকভাবে লঙ্ঘনে জড়িত চেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ নির্দেশনায় পড়া বাকিরা হচ্ছেন চীনের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা ওয়াং মিংশান এবং ওয়াং জুনশেন, জিনজিয়াংশের সাবেক ডেপুটি পার্টি সেক্রেটারি ঝু হাইলুন, জিনজিয়াং প্রোডাকশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কর্পস (এক্সপিসিসি)।

অবশ্য জিনজিয়াংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা চেন কুয়াংগোউকে যুক্তরাষ্ট্র কালো তালিকাভুক্ত করলেও তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে যায়নি ইইউ। অর্থাৎ, চীনের বিরুদ্ধে কিছুটা নমনীয়ই থাকতে চেয়েছে ২৭ দেশের এই জোট।

চীন বরাবরই জিনজিয়াংশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিন ইইউর নিষেধাজ্ঞার জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে মোটেও দেরি করেনি তারা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতা, পররাষ্ট্র নীতিনির্ধারক কমিটিসহ ১০ ব্যক্তি-সংগঠনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেইজিং। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন চীনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের প্রধান জার্মান রাজনীতিবিদ রেইনার্ড বাতিকোফার।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব অ্যান্ডার্স ফগ রাসমুসেন প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক জোট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্র্যাসিসকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছে তারা।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তরা এখন থেকে চীনে প্রবেশ ও ব্যবসা করতে পারবেন না। তাদের বিরুদ্ধে জিনজিয়াং নিয়ে চীনের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের গুরুতর ক্ষতি করার অভিযোগ এনেছে বেইজিং।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তাদের ‘ভুল সংশোধন’ এবং চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানিয়েছে।

তিয়ানমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রপন্থীদের ওপর সহিংসতার জেরে ১৯৮৯ সালে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর চীনের বিরুদ্ধে তেমন আর কোনও কড়া পদক্ষেপ নেয়নি ইইউ। অবশ্য ২০২০ সালে দুইজন হ্যাকার ও একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল তারা। চীনের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেই অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে।