আল্লাহর সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল কাজ তালাক

আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম:

শরীয়া আইনে জায়েয বা বৈধ কাজের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় কাজ হচ্ছে তালাক। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ابغض الحلال الى الله الطلاق.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সর্বাপেক্ষা অপছন্দনীয় হালাল হচ্ছে তালাক। (আবু দাউদ শরীফ)

 طلاق (তালাক) – এর শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:

طلاق এর আভিধানিক অর্থ: খুলে দেয়া, ছেড়ে দেয়া, বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করা।

সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় নির্ধারিত শব্দাবলী দ্বারা হালান (সাথে সাথে) অথবা মালান (মাল-সম্পদের মাধ্যমে) বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করাকে তালাক বলা হয়। (বাহরুর রায়িক, আলমগীরী)

طلاق – এর হুকুম-আহকাম:

যদি রাজঈ তালাক হয় তাহলে ইদ্দত (তিন স্বাভাবিক মাজুরতা) শেষ হওয়ার পর পরষ্পর জুদা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আর যদি তালাকে বাইন হয়, তখন ইদ্দত খতম বা শেষ হওয়া ব্যতীতই সাথে সাথে জুদা বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদীর, আলমগীরী)

আর যদি তিন তালাক পূর্ণ হয়ে যায়, তখন এই স্ত্রীকে হিলা (অন্য কারো সাথে বিবাহ দেয়ার পর তার থেকে বিচ্ছিন্ন) না হওয়া পর্যন্ত কখনো সে বিবাহ করতে পারবে না। (আল বাহরুল মুহীত লিচ্ছুরুখসী, আলমগীরী)

উল্লেখ্য যে, তিন তালাক রাজঈ হয় না। এমনকি “তালাকে রাজঈ” নাম উচ্চারণ করা সত্ত্বেও তিন তালাক হয়ে গেলে আর স্বামীর কোন ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব থাকে না। সেটা তালাকে মুগাল্লাযা হয়ে যায়। এজন্য পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে তিন তালাক দেয়ার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কারণ, তালাক এতই নিকৃষ্ট কাজ যে, যদি কেউ এক তালাক দিয়ে রাজায়াত বা পূনরায় ফিরিয়ে নেয় কিংবা বিবাহ দোহরাইয়া ২/৩ বছর পর পূনরায় এক তালাক দেয় এবং তারপর ২/৩ বছর পর আবার এক তালাক দেয় তাহলে সব মিলে যোগ হয়ে তালাকে মুগাল্লাযায় পরিণত হয়ে সম্পূর্ণভাবে তালাক হয়ে যায়। একজন পুরুষ একজন স্ত্রীর উপর তিন তালাক দেয়ার অধিকার প্রাপ্ত হয়ে থাকে।

এখানে আরো জেনে রাখা ভালো যে- এক তালাক দেয়ার পর যতদিন ইদ্দত শেষ না হয় (স্বাভাবিক মাজুরতা তিন বার অতিবাহিত হওয়া) ততদিন আরো দুই তালাক দেয়ার ক্ষমতা স্বামীর থাকে। ইচ্ছা করলে দ্বিতীয়, তৃতীয় তালাক ও দিতে পারে। কাজেই, ইদ্দতের মধ্যে যদি এক তালাক বা দুই তালাক দেয়, তবে তাও তালাক হবে।

 ‘তালাক দিব’ বললে তালাক হবে না। অতীত বা বর্তমান কালের শব্দ ব্যবহার করলে তালাক হবে। কিন্তু ভবিষ্যতকালের শব্দ ব্যবহার করলে তালাক হবে না।

কাজেই, যদি কেউ তার আহলিয়াকে বলে যে, “যদি তুমি অমুক কাজ করো, তবে তোমাকে তালাক দিবো” এরূপ বললে, সেকাজ করুক বা না করুক- তালাক পতিত হবে না। অবশ্য যদি এরূপ বলে যে, “যদি তুমি অমুক কাজ করো তবে তোমাকে তালাক দিলাম।” তাহলে যখন একাজ করবে, তখনই তালাক সংঘটিত হবে।

 যদি কেউ তালাক দেয়ার সাথে সাথেই ইনশাআল্লাহ বলে দেয় কিংবা এরূপ বলে যে, মহান আল্লাহ পাক চাহে তো তালাক, তাহলে তালাক কার্যকর হবে না। অবশ্য তালাক দেয়ার পর কিছুক্ষণ দেরী করে যদি ইনশাআল্লাহ বলে, তবে তালাক হয়ে যাবে।

শরীয়ত তালাক দেয়ায় নিরুৎসাহী করে-

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে-

عن حضرت ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ايما امرأة سألت زوجها طلاقا فى غير ما باس فحرام عليها رائحة الجنة.

অর্থ: হযরত সাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে নারী নিরূপায় হওয়া ব্যতীত আপন স্বামীর নিকট তালাক চায় সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা।” নাউযুবিল্লাহ! (আহমদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ ও দারেমী শরীফ)

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে একান্ত প্রয়োজনে শান্তি, শৃঙ্খলা, ফিতনা-ফ্যাসাদমুক্ত জীবন যাপনের জন্য তালাকের বিধান রাখা হয়েছে। মনগড়াভাবে কোন কিছু করার সুযোগ নেই।

কথায় কথায় তালাক দেয়া, একই সঙ্গে তিন তালাক দেয়া ইত্যাদি শয়তানী কাজ। তাতে অনুশোচনার সৃষ্টি হয়। পরিণতির কথা চিন্তা করার সুযোগ থাকেনা। এরূপ কাজে তালাকদাতা গোনাহগার হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অসন্তুষ্টির রোষানলে পড়ে যায়। তালাকদাতা ও প্রার্থী উভয়ই অশান্তিতে জীবন যাপন করে। কখনো বা লা’নতগ্রস্থ হয়। এমনকি ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুবরণের সমূহ সম্ভাবনা থাকে।#

লেখক: শিক্ষক, লেখক ও গবেষক।